অ্যানিমেশনের আদ্যোপান্ত
?টিভি দেখতে আমরা সবাই কমবেশি ভালবাসি, অস্বীকার করতে পারব না। সবার আলাদা আলাদা পছন্দও আছে। এমনকি এই পছন্দের জের ধরে রিমোট নিয়ে নিজেদের মাঝে ঝগড়া লেগে যাওয়াও খুব পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু হঠাৎ দেখলেন একটা চ্যানেলে এসে সব ঝগড়া ভুলে মনোযোগ এখন টিভির স্ক্রিনের দিকে। কি এমন দেখাচ্ছিল টিভিতে যা সবাইকে একসাথে মন্ত্রমুগ্ধ করে?
উত্তরটা সহজ, অ্যানিমেশন সিনেমা।

অ্যানিমেশন কী?
অনেকেই অ্যানিমেশনকে সিনেমার একটি ধরণ বলে ভুল করেন। আসলে অ্যানিমেশন একটা মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে অনেক ধরনের গল্প দর্শকদের সামনে তুলে ধরা যায়। অ্যানিমেশনকে সাধারণভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে যে, এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে কৌশলে স্থির চিত্রকে চলমান চিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমাদের চোখ কোন চিত্রকে কেবল ১/১০ সেকেন্ডের জন্য ধরে রাখতে পারে, তাই যদি একাধিক চিত্র দ্রুতগতিতে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয় আমাদের মস্তিস্ক সবগুলো চিত্রকে একটি চলমান চিত্র হিসেবে দেখতে পায়।
কিভাবে প্রচলন?
প্রচলিত অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ সেলুলয়েড শিটে ছবি এঁকে তার ছবি তোলা হত। গোড়ার দিকের কার্টুনগুলি এ পদ্ধতিতেই তৈরি।
সময়ের সাথে অ্যানিমেশন পদ্ধতি উন্নত হয়েছে, এখনও হয়ে চলেছে। এখনকার বেশিরভাগ অ্যানিমেটেড সিনেমাগুলি কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজ অর্থাৎ সিজিআই (CGI) ব্যাবহার করে নির্মিত। অ্যানিমেশনের পদ্ধতিগুলোকে যদি ভাগ করতে বলা হয় তাহলে প্রধান পাঁচটি ভাগ মাথায় আসে-





অ্যানিমেশনের পথযাত্রা
শুরুটা যে ঠিক কখন তা বলা মুশকিল। কারণ গল্প বলার চর্চা তো মানুষ যুগ যুগ ধরে করে আসছে । তবে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায় এর শুরু সিনেমারও অনেক আগে। আঠার এবং উনিশ শতকে যখন ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাতে শিল্প বিপ্লবের ব্যাপকতা, তখনকার সময়ে কিছু যন্ত্র তৈরি করে পরখ করে দেখা হচ্ছিল স্থির চিত্রকে চলমান করা যায় কিনা। এমনই কিছু যন্ত্র ছিল থোমাট্রোপ, ফেনাকিষ্টোস্কোপ এবং জুট্রোপ।



ডিজনি ও অ্যানিমেশন
অ্যানিমেশন নিয়ে এত কথা হচ্ছে অথচ এখন পর্যন্ত একবারও ডিজনির নাম আসছে না,তা কি করে হয়? ১৯২৮ সালে স্টিমবোট উইলি মিকি মাউস ও মিনি মাউসকে নিয়ে গড়ে তোলে একটি কার্টুন সিনেমা। এতে ছিল চিত্রের সাথে ছন্দসমতা রাখা শব্দ। মিকি মাউসের অসাধারণ সাফল্য ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওকে নিয়ে যায় অ্যানিমেশন শিল্পের শীর্ষে। সাথে সূচনা হয় আমেরিকান অ্যানিমেশনের স্বর্ণযুগের। এটি স্থায়ী হয় প্রায় ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত। এসময়ে ১৯৩০ সালে জার্মানিতে প্রথম পাপেট অ্যানিমেশন “টেল অফ দ্য ফক্স” মুক্তি পায়। তার পরপরই ওয়াল্ট ডিজনি উপস্থিত হয় হাতে আঁকা নিখুঁত অ্যানিমেশন “ স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্যা সেভেন ডর্ফস” নিয়ে।
পরবর্তীতে অ্যানিমেশন টেলিভিশন এবং সিনেমা উভয় ইন্ডাস্ট্রিতেই দখল নিয়ে নেয়। ক্লে- অ্যানিমেশন, জেরগ্রাফি, থ্রি ডি এর সাথে পরিচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে পুরো শতাব্দী জুড়ে চলতে থাকে অ্যানিমেশনের অগ্রগতি। তবে এই অগ্রগতিকে চূড়ান্ত সফলতার মুকুট পড়িয়ে দেয় ১৯৯৫ সালে সম্পূর্ণভাবে সিজিআই দিয়ে নির্মিত সিনেমা “টয় স্টোরি”। এরপর থেকে অ্যানিমেশন শিল্প শুধু এগিয়েই চলেছে।
