আজ ১৪ই এপ্রিল, বাংলা নববর্ষ
আজ ১৪ই এপ্রিল, বাংলা নববর্ষ। সবাইকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্টিফিক সোসাইটির পক্ষ থেকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা
প্রতিবছর বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে বৈশাখ মাসের প্রথম তারিখ এই দিনে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়। অতীতের দুঃখ-কষ্ট সব ভুলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ উৎসবে মেতে উঠে।
পহেলা বৈশাখ আসলে কবে থেকে উদযাপিত হচ্ছে?
মোঘল শাসনামলে আরবি বা হিজরি বর্ষ অনুযায়ী ভূ-স্বামীরা ভূমি কর আদায় করতেন। যেহেতু আরবি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল, কৃষিবছরের সাথে সেটির সামঞ্জস্য ছিল না। ফলে কৃষকদের কর পরিশোধ করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যেত। কৃষিকাজের সুবিধার্থে মোঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। একজন বিখ্যাত পন্ডিত ও জ্যোতির্বিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তনের কাজ করেন। এটি কার্যকর হয় ৫ নভেম্বর, ১৫৫৬ সালে। প্রথমে সনটি “ফসলী সন” হিসাবে নামকরণ করা হলেও পরে “বঙ্গাব্দ” নামে পরিচিতি পায়। গ্রেগরীয় ক্যালেনডার অনুসরণ করে মাস,সপ্তাহ নির্ধারণ করা হয়।
বারোমাসের নামকরণ করা হয় নক্ষত্রের নামে।
মাসের নামঃ
১. বৈশাখ– বিশাখা
২.জ্যৈষ্ঠ– জ্যেষ্ঠা
৩.আষাঢ়– উত্তরাষাঢ়া
৪.শ্রাবণ– শ্রবণা
৫.ভাদ্র– পূর্বভাদ্রপদ
৬.আশ্বিন– অশ্বিনী
৭.কার্তিক– কৃত্তিকা
৮.অগ্রহায়ণ– মার্গশীর্ষ, মৃগশিরা
৯.পৌষ– পুষ্য
১০.মাঘ– মঘা
১১.ফালগুন– উত্তর ফালগুনী
১২.চৈত্র– চিত্রা
সপ্তাহের দিন সংখ্যা:
অন্যান্য ক্যালেন্ডারের মতো বাংলা ক্যালেন্ডারে সাত দিনে এক সপ্তাহ,নামকরণ করা হয় গ্রহ নক্ষত্রের নামানুসারে।যেমন :
১.সোমবার– মুন বা চাঁদ
২.মঙ্গলবার– মারস্ বা মঙ্গলগ্রহ
৩.বুধবার–মারকিউরি বা বুধগ্রহ
৪.বৃহস্পতিবার–জুপিটার বা বৃহস্পতিগ্রহ
৫.শুক্রবার–ভেনাস বা শুক্রগ্রহ
৬.শনিবার–সাটার্ন বা শনিগ্রহ
৭.রবিবার–সান বা সূর্য
বৈশাখ মাসের প্রথম দিন ১৪ই বা ১৫ই এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হত।
১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি বাংলা ক্যালেন্ডার পরিমার্জনের কাজ করেন। তারা প্রস্তাবনা দেন, সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণের ফলে ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একদিন যোগ হবে। ১৯৮৭ সালে পরিমার্জিত ক্যালেন্ডারটি সরকারিভাবে গৃহীত হয়। সংশোধনের ফলে বাংলাদেশে সবসময় ১৪ই এপ্রিল নতুন বছর পালিত হয়।
পহেলা বৈশাখ কিভাবে উদযাপিত হয়?
সম্রাট আকবরের শাসনকাল থেকেই বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা। বাংলার কৃষকরা চৈত্র মাসের শেষ দিন সব কর পরিশোধ করত। আর পরদিন জমিদাররা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন।এছাড়াও মেলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত।
বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। ব্যবসায়ীরা পুরাতন হিসাব নিকাশ শেষ করে নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন। খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণও করতেন। এ উৎসবটি আজও প্রচলিত আছে। সময়ের সাথে সাথে নববর্ষ আমাদের জনজীবনের সাথে মিশে লোকউৎসবে পরিণত হয়েছে।বর্তমানে অনেক জাঁকজমকপূর্ণভাবে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়।
গ্রামীন জীবনে পহেলা বৈশাখ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। নববর্ষের দিন গ্রামের মানুষ ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখে,ভালো খাবার খায় এবং ভালো পোশাক পরে।এটাকে তারা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক মনে করে।এছাড়াও প্রিয়জনদের উপহার দেয় এবং নানা ধরনের খাবারের আয়োজন করে।
নববর্ষের বিশেষ আকর্ষণ বৈশাখী মেলা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় বিভিন্ন মৃৎশিল্পের জিনিস, শিশু-কিশোরদের খেলনা ও মহিলার সাজ-সজ্জার সামগ্রী ইত্যাদি পাওয়া যায়।চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক, পুতুল নাচ,নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি মেলার বিশেষ আকর্ষণ।
বর্ষবরণকে ঘিরে জমজমাট আয়োজন হয় রাজধানীতে। প্রভাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুশিল্পীদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দিনটিকে করে তোলে আরও উৎসবমুখর। রমনার বটমূলে ছায়ানট মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।এছাড়াও নজরুল একাডেমি, বাংলা একাডেমি সহ নানা সংগঠন নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি গ্রহণ করে।
শুধু তাই নয়,নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লাল ও সাদা শাড়ি পরে এবং তরুণরা পরে পাজামা ও পাঞ্জাবি। সম্প্রতি পান্তা ইলিশ খাওয়া একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তবে, এতে আমাদের গ্রামীন ঐতিহ্য সংরক্ষিত থাকছে।
পরিশেষে, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ঐতিহ্য বহাল থাকুক যাতে মানুষ পুরনো সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে নতুনভাবে জীবন যাপন করার অনুপ্রেরণা পায়। ????
তাই তো কবি বলেছেন –
“মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।
এসো এসো….
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো”
References:
1.://bn.banglapedia.org/index.php/%E0%A6%AA%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE_%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%96
2.https://bn.quora.com/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2…
3.https://banglapanjika.com/…/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6…/
Written by:
Sadia Osman Lorin
General Member
Team : Phoenix
Institute of Marine Sciences
Session: 18-19
Tag:cuss