আজ ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক বন_দিবস
#আজ_২১_মার্চ_আন্তর্জাতিক_বন_দিবস।
বন রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘বনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।’ ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় বন ও বনভূমির নিরাপত্তা রক্ষার্থে ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বন দিবস ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বন দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বন বিভাগের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বন আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট ভূমির ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। এই হিসাবে বনের বাইরের গাছ আমলে নেওয়া হয়নি। কিন্তু বন বিভাগের নতুন সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বনের বাইরে গাছের পরিমাণ মোট ভূমির ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এসব গাছের বেশির ভাগই বেড়ে উঠেছে মূলত সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে। সেই হিসাবে বনের ভেতর ও বাইরে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট ভূমির সাড়ে ২২ শতাংশ।
ভাওয়ালের গজারি বন আজ ধ্বংসের পথে। শুধু গাছই নয়; বন্যপ্রাণীরাও রেহাই পাচ্ছে না এদের হাত থেকে। গত বছর জাতীয় সংসদে সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পরিবেশিত এক তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ২৬ লাখ হেক্টর এবং এর মধ্যে ২ লাখ ৬৮ হাজার একর সরকারি বনভূমি বেদখলে রয়েছে। বনভূমি উজার হওয়ার কারণে বাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল সংখ্যক প্রাণী আজ বিলুপ্তির মুখে। এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়া হরিণ, সজারু, মেছো বাঘ, বনবিড়াল, গুইসাপ, বাঘডাশ, ইরাবতি ডলফিন, লবণ পানির কুমির, সজারু, ভোদর, লাল মাছরাঙা, খয়েরি মাছরাঙা, জলপাই, কচ্ছপ, অজগর, শঙ্খচূর সাপ ও শুশুক।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপনের কারণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার বন ধ্বংস হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে সেখানকার পরিবেশ, বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য। ধ্বংস হয়েছে ৬ হাজার ১৬৩ একর বনভূমি। এছাড়া বসতি স্থাপন করতে গিয়ে এশিয়ান হাতির আবাসস্থল ও বিচরণ ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে উখিয়া ও টেকনাফের বন্যাঞ্চল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বনবিভাগ। বনবিভাগ এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি ও প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করা হয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানির ব্যবস্থা করতে না পারায় বনভূমির ওপর চাপ বাড়ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের ৬ হাজার ৮০০ টন জ্বালানির প্রয়োজন হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন ধরনের ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হলেও রান্নার জন্য কোনো জ্বালানি সরবরাহ করা হয় না। ফলে প্রতিদিনই তারা বনাঞ্চল থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করছে। বনবিভাগ তাদের পাঠানো প্রতিবেদনে বলছে, ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য বন থেকে প্রচুর পরিমাণে কাঠ ও বাঁশ সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গারা। পাহাড় কেটে মাটি সমান করে ঘরবাড়ি তৈরি করছে তারা। কক্সবাজার জেলার পাহাড়গুলো প্রধানত নরম ও দোআঁশ মাটির হওয়ায় মাটির কাঠিন্য ও দৃঢ়তা তুলনামূলকভাবে কম। ফলে টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা বেড়ে যায়। গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে অনেক ক্ষতি হয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড় ও বনভূমি কেটে অপরিকল্পিত রোহিঙ্গা বসতি, রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করায় এবং গাছ কাটার কারণে মাটি উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এতে বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গা বসতি এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। বনবিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ নিয়ন্ত্রনাধীন উখিয়া ও টেকনাফে ২ হাজার ২৭ একর সৃজিত বনভূমি এবং ৪ হাজার ১৩৬ একর প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮৮০ জন রোহিঙ্গা বনাঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ২ লাখ ১২ হাজার ৬০৭টি গোসলখানা, ত্রাণ সংরক্ষণের জন্য ২০টি অস্থায়ী গুদাম, ১৩ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন, ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং ২০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক একটি অবকাঠামো তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বনভূমি ও বনজসম্পদ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। এছাড়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে গেলেও জায়গা দখল হয়ে যেতে পারে এবং স্থানগুলো অপসারণ করে বনায়ন করাও কঠিন হয়ে পড়বে।
কৃষি ও শিল্পের বিকাশের জন্য বনভূমি ধ্বংস করতে হবে এ কথা আমরা বিশ্বাস করি না। মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ বনভূমি সুরক্ষা করেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। মালয়েশিয়ায় এখনো বনাঞ্চলের পরিমাণ দেশের মোট আয়তনের ৭৯ দশমিক ৭ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার ৬৭ দশমিক ৬ এবং জাপানে ৬৩ শতাংশ। আর আমরা শিল্প ও কৃষি উন্নয়নের অজুহাতে গাজীপুরের মতো জায়গায় গত এক দশকে ৭৯ শতাংশ বনাঞ্চল কী নির্মমভাবে ধ্বংস করেছি। ২০০৬ থেকে ’১৪ সাল পর্যন্ত উজার হওয়া বনের ৪০ শতাংশ কৃষি জমিতে রূপান্তর করেছি। পরিবেশ ধ্বংস করে যে উন্নয়ন টেকসই হয় না এটা এখন সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত সত্য।
এ অবস্থায় বিশ্ব বন দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক বাংলাদেশের বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান। প্রয়োজনে বনবিভাগকে ঢেলে সাজানো। এক্ষেত্রে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি। সেগুলো হলোঃ
১। বন রক্ষায় বনবিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সক্রিয় করে তোলা।
২। দখলকৃত বনভূমি উদ্ধার করে সেখানে নতুন করে বন সৃজন করা।
৩। বৃক্ষ ও বন্যপ্রাণী হত্যা এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪। বন সুরক্ষাকে একটি জাতীয় আন্দোলনে পরিণত করা এবং বনের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা ও ভালোবাসা সৃষ্টি।
৫। কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনার নামে বনভূমি ধ্বংস না করা।
৬। বনভূমির আশপাশে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো শিল্প কারখান বা ইটভাটা স্থাপন না করা।
অন্যথায় বাংলাদেশের বনভূমি রক্ষা তথা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের জীবিকা রক্ষা করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব না।
সম্ভব হবে না ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশের স্বপ্নের সঠিক বাস্তবায়ন।
#cuss
#International_Day_Of_Forest
References :
1. https://barta24-com.cdn.ampproject.org/…/world-forest…
2. https://www.protidinersangbad.com/…/www…/national/235435
Content Credit :
Written by :
Umma Habiba Eshita
Department of Zoology
Session : 2019-2020
Poster Credit :
Nusrat Tasnim
Geography & Environmental Studies
Session :2021-22
Tag:cuss