আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত “বিজ্ঞানের নথিপত্রে মাতৃভাষা” শীর্ষক প্রবন্ধ সম্পাদনা প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অধিকারী মোঃ আলাউদ্দিন এর লেখনী প্রকাশ
????আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত “বিজ্ঞানের নথিপত্রে মাতৃভাষা” শীর্ষক প্রবন্ধ সম্পাদনা প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অধিকারী মোঃ আলাউদ্দিন এর লেখনী প্রকাশ????
????“বিজ্ঞানের নথিপত্রে মাতৃভাষা “????
⭐“যারা বলে বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করা যায় না তারা হয়তো বাংলা ভাষা বুঝে না, নয়তো বিজ্ঞানটাই ভালো বুঝে না”
…..অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু
????মাতৃভাষা বাংলা বাঙালি জাতির মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের এক প্রাণস্পন্দনময়ী মাধ্যম। আমাদের বাংলা ভাষায় যতো বিজ্ঞানকে চর্চা করতে পারবো, আমরা ততোই নিজেদের বিজ্ঞান মনস্কজাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। বিজ্ঞানকে পূর্ণতা দান করতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা যেমন প্রয়োজন, তেমনি, চতুর্থ (৪) শিল্পবিপ্লব জন্য পৃথিবীকে পূর্ণতা দিতে আধুনিক কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিজ্ঞানের শৈল্পিক চর্চা প্রয়োজন। পৃথিবীতে যেসব দেশ বিজ্ঞান চর্চা করে উন্নতির শিখরে আহরণ করেছে, সব দেশ মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এ্খন আমাদের বাংলাদেশও বিজ্ঞান চর্চায় বাংলা ভাষাকে দিন দিন গুরুত্ব দিচ্ছে। সুতরাং বলা যায় কোনে জাতির চিন্তনশক্তির,কল্পনাশক্তির ও বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশের প্রধান মাধ্যম মাতৃভাষা আর মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চিন্তা বিকশিত করা।
✨ভাষা ও বিজ্ঞান: অনেকে মনে করি বিজ্ঞান ও ভাষা দুটি আলাদা জিনিস। প্রকৃতপক্ষে এটা ঠিক নয়। ভাষা ও বিজ্ঞান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিজ্ঞান বুঝতে আমাদের ভাষার সাহায্য লাগে, আবার ভাষা বুঝতে বিজ্ঞানের সাহায্য লাগে।আজ ভাষা না জনলে মানুষ হতো বিজ্ঞান ও জ্ঞানের অন্ত:সারশূন্য। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ায় পৃথিবীর বেশিরভাগ বিজ্ঞান চর্চা ইংরেজি ভাষায় হয়, কিন্তু বাঙালি হিসেবে আমাদের বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের নথিপত্র, গবেষণা পত্র বাংলা ভাষায় অনুধাবন ও স্মৃতিচারণ করতে হয় যদিও আমরা বাঙালিরা এসব লিখি,প্রকাশ করি ইংরেজি ভাষায়। এক্ষেত্রে বাংলা ভাষার বৈজ্ঞানিক পরিভাষা, বিজ্ঞান চর্চা, বিদেশি ভাষার বই বাংলাতে অনুবাদ এগুলোর যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
????মাতৃভাষা ও বিজ্ঞানচর্চা: অমর একুশে মহান শহিদ দিবসআসন্ন। আমরা প্রতিবছর মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। পাশাপাশি দেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার শপথ নিই। এখন তো একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়।ইউনিসেফ ও জাতিসংঘ যে মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় ভূষিত করেছে, তার পেছনে একটা নয়,অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রতিটি জাতির জ্ঞানবিজ্ঞানে এগিয়ে যাওয়ার একটি সুন্দর পূর্বশর্ত হলো, যার যার মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জন। বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, মাতৃভাষায় সুন্দরভাবে পড়তে পারে, এমন শিশুর সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়াতে পারলে দেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত
মাতৃভাষার সঙ্গে জ্ঞানবিজ্ঞানে এগিয়ে যাওয়া ও সেই সঙ্গে দেশের আর্থ-সমাজিক উন্নয়ন সাধনের নিবিড় সম্পর্কের বিষয়টি আগে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলেও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা তা উপলব্ধি করেছি। আর সে জন্যই প্রায় ৭৫ বছর আগে মাতৃভাষা বাংলার জন্য, বাংলায় কথা বলার অধিকার সংরক্ষণের জন্য, তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য আমরা রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছি। আমরা মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জন করেছি।
তবে ভাষাবিদদের গবেষণায় আজ এটা প্রতিষ্ঠিত যে মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারলে অন্তত তিনটি বিদেশি ভাষা সহজে শেখা যায়। আর আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে দু–তিনটি বিদেশি ভাষায় দক্ষতা না থাকলে টিকে থাকা কঠিন। এগিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা।
????সময়ের পরিবর্তনে ও মানুষের জীবনাচরণের নিত্যনতুন বৈচিত্র্যে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন অব্যাহত থাকে। কিন্তু মূল কাঠামোটা আবহমান ধারাকে অনুসরণ করে চলে। ভাষাবিজ্ঞানীরা এই কাঠামোর বিশ্লেষণ করে ভাষার প্রকৃতি, পরিবর্তন ও শেকড়ের সঙ্গে তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করেন। বাংলা ভাষা এমনই একটি সমৃদ্ধ ভাষা, যেটির নিজস্ব স্বকীয়তা যেমন রয়েছে, তেমনি এর শব্দ বৈচিত্র্য এই ভাষাকে বিশ্বজনীন রূপ দিয়েছে। তবে যেভাবে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা হওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না। এখনও এ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার আগ্রাসন আমাদের মানসিকতায় কাজ করছে, যেটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ কথার মাধ্যমে ইংরেজি ভাষাকে অশ্রদ্ধা করা হচ্ছে না; কিন্তু যখন এটিকে কেউ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, তখন একটি বিদেশি ভাষার দ্বারা আমাদের মাতৃভাষা বাংলা শোষিত হয়। আবার অন্যভাবে বলা যায়, যে ভালো বাংলা বলতে ও লিখতে পারে না, তার অন্য ভাষায় দক্ষতা যেভাবে গড়ে উঠার কথা, সেভাবে গড়ে উঠে না। বাংলা ভাষার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বাংলা ভাষাকে তাহার সকল প্রকার মূর্তিতেই আমি হৃদয়ের সহিত শ্রদ্ধা করি, এ জন্য তাহার সহিত তন্ন তন্ন করিয়া পরিচয়সাধনে আমি ক্লান্তিবোধ করি না।’
????আমাদের দেশের মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি ভাষা এবং বইগুলোও ইংরেজি ভাষার। ইংরেজির পাশাপাশি উচ্চতর স্তরের শিক্ষার্থীরা যদি বাংলা ভাষার বই পেতো এবং বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা করতে পারতো তাহলে আজ বাংলা ভাষা উন্নত বিজ্ঞানমনস্ক ভাষায় পরিনত হতো। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা বাঙালিদের বিজ্ঞান বুঝতে, অনুসরণ,অনুধাবন ও বিজ্ঞানমনস্ক করতে শুধু সাহায্যে করবে না বরং বাংলা ভাষার খ্যাতি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে। বাংলা ভাষাকে একটি বিজ্ঞানোপযোগি স্বতন্ত্র ভাষায় প্রতিষ্ঠিত করবে।
????মাতৃভাষায় উন্নত দেশের বিজ্ঞান চর্চা: বিজ্ঞানের নথিপত্রে মাতৃভাষা গুরুত্ব অবর্ণনীয়। যারা মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে বিজ্ঞানচর্চা করেছে সেসব দেশ আজ বিজ্ঞান চর্চায় স্বর্ন শিখরে আহরণ করেছে। আজ থেকে ২০০০-২৫০০ পূর্বে গ্রিক দার্শনিক, বিজ্ঞানীরা সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল সর্বপ্রথম বিজ্ঞান চর্চা তাদের মাতৃভাষায় শুরু করেছিল, এখনো বিজ্ঞানের পরিভাষায় গ্রিক, ল্যাটিন শব্দের বেশ প্রাচুর্য রয়েছে। গ্রিকরা কিন্তু তাদের মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝতে পেরে তাদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞান গবেষণা ও শিক্ষা অর্জন করেছিল। তাদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা যেমন তাদের খ্যাতি এনে দিয়েছে, বিজ্ঞানে যুক্ত হয়েছে তাদের মাতৃভাষার পরিভাষা ( গ্রিক,ল্যাটিন শব্দ)। জাপানি, চিনা,জার্মানি, কোরিয়ানরা তাদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা, বৈজ্ঞানিক সাময়িকী প্রকাশ, গবেষণা চর্চা সহ সব ধরনের বিজ্ঞান নথিপত্র তাদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রকাশিত করে।এমনকি এসব দেশের একাডেমিক পাঠ্যবই গুলো ওদের নিজস্ব মাতৃভাষায় লিখন, পঠিত হয়। এসব দেশের পড়াশোনা করা উদ্যমী তরুণ- তরুণীরা তাদের নিজস্ব মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরজি বা অন্যভাষার দক্ষতা রয়েছে যা তাদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞান নথিপত্র, জার্নাল,গবেষণা চর্চা করতে সহায়তা করে।
☘️এসব উন্নত দেশগুলোর সরকার বা রাষ্ট্রপরিচালকগণ মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ও মাতৃভাষায় অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা করা, গবেষণা করাকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুদান করে এবং তাদের নিজস্ব মাতৃভাষাকে অন্যদেশের নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শিখন পাঠন চর্চা করা ও পরিপূর্ণভাবে শিক্ষা দেয়া হয়। এভাবে তাদের মাতৃভাষা পুরোবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
✨পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর হারুনর রশীদ তার ‘বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান’ (১৯৮৪ পৃ-৬৭) গ্রন্থে লিখেছেন : “গত তিনশ’ বৎসরে ইউরোপে বিজ্ঞান প্রগতির কারণ বোধ হয় দু’টি। একটি হল কৃষির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা পরিত্যাগ করা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেই ইউরোপ তার প্রথম শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে আর্থ-সমাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছে। দ্বিতীয় কারণটি হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চায় মাতৃভাষার ব্যবহার, পৃথিবীর কোনো উন্নতিকামী, আত্মসচেতন জাতি বিদেশি ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কথা চিন্তাও করতে পারে না। রাশিয়া, জার্মানি, তুরস্ক, ফ্রান্স, জাপান, চীনের মতো উন্নত রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব করেছে মাতৃভাষায় প্রযুক্তি চর্চার মাধ্যমে।
কবি সাহিত্যক ও বিজ্ঞানীদের বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা :আজকে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ ও উন্নত শব্দ ভান্ডার হওয়ার মূলে রয়েছে কবি সাহিত্যিকদের বাংলা সাহিত্য চর্চা ও বিজ্ঞানিদের বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে আজ বাংলা ভাষার আধুনিক যুগ পর্যন্ত যতো কবি সাহিত্যিক বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেছে তাদের অবদানে আজ বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ। কিন্তু বিজ্ঞানচর্চায় আমাদের বাংলা ভাষা এখনো কিছুটা পিছিয়ে আমাদের বাঙালি জাতির মন-মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি, উপযুক্ত পদক্ষেপের অভাবে। চীন, জাপান, রাশিয়া, জার্মানি এই দেশগুলো তাদের ভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল প্রকাশের উদ্যোগ এখনও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। যদি বাংলাভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্বমানের জার্নাল প্রকাশ করা হয় তবে এতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা গবেষণাপত্র জমা দিতে পারবেন। বাংলা ভাষাতে একজন শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্র লেখা যত সহজ ও প্রকৃত বিষয়কে তুলে ধরা সম্ভব হবে তা ইংরেজি বা অন্য ভাষায় সম্ভব নয়। এখন প্রশ্ন হতে পারে, এই গবেষণাকে কীভাবে বিশ্বজনীন করা যাবে। এ জন্য যারা এই জার্নাল প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, গবেষণার প্রকৃতি অনুযায়ী বাংলায় লেখা গবেষণাপত্রগুলোকে প্রথিতযশা বাঙালি বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে ইংরেজি বা অন্য ভাষায় অনুবাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য তার ছাত্রদের কাছে রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্দেলিভের কথা বলতেন, যিনি পর্যায় সারণির আবিষ্কারক। বিজ্ঞানী মেন্দেলিভ তার কাজ রাশিয়ান জার্নালে প্রকাশ করতেন, কারণ তিনি চাইতেন পৃথিবীর অন্য ভাষাভাষী বিজ্ঞানীরা যেন রুশ ভাষা শিখতে বাধ্য হন। বাংলাভাষার প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি ভাবা যেতে পারে।একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, উন্নত রাষ্ট্রগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের যে গবেষকরা রয়েছেন তাদের মতামত হল, ইংরেজিতে গবেষণাপত্র লিখলেও বা গবেষণা করলেও তাদের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে তারা গবেষণার বিষয়টিকে বাংলাভাষার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করেন আর এতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কাজেই সেখানে ইংরেজি ভাষার প্রয়োগ থাকলেও মাতৃভাষার মাধ্যমে গবেষণা বা সৃষ্টির কল্পনা একজন মানুষকে বেশি প্রভাবিত করে। বিষয়টি নিয়ে একটি ভালো গবেষণা হতে পারে। প্রথমদিকে বাংলাভাষায় রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, জগনানন্দ রায়, জগদীশ চন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়সহ অনেকেই বিজ্ঞান চর্চা করেছেন। আমাদের দেশে এ সম্বদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন কুদরত-ই খুদা, কাজী মোতাহার হোসেন, আবদুল্লাহ্ আল-মুতী শরফুদ্দীন এবং আরও অনেকে। এছাড়াও স্যার সত্যেন্দ্রনাবসু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় ১৯৪৮সালে পশ্চিমবঙ্গে গড়ে তুলেছে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ। বাংলাভাষার প্রথম বিজ্ঞান লেখক আব্দুল্লাহ আল- মুতী শরফুদ্দীন বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক বই বাংলা ভাষায় লিখে সর্বপ্রথম কলিঙ্গ পুরস্কার লাভ করেন।মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম স্যার।স্যার নিজের ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার জন্য বিদেশি বিলাসবহুল জীবন ত্যাগ করে মাএ ২৮০০ টাকা বেতনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি নিয়ে নিজেকপ মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করেন। পরবতীতে বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০১ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।
????বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় প্রধান অন্তরায় ও সমস্যা সমাধানের উপায়:
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ও বিকাশ নিসন্দেহে ভালো ও প্রশংসনীয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আমাদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যেমন:-
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক পরিভাষার অভাব মাতৃভাষায় বিজ্ঞান বিকাশে প্রধান অন্তরায়।এক্ষেত্রে বিজ্ঞানবিষয়ক সহজ সরন প্রাঞ্জল পরিভাষার সৃষ্টির প্রয়োজন।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ের অভাব,।ভাষা সংস্কৃতি, সাহিত্য, যতোটা অগ্রগতি হয়েছে, বিজ্ঞান ততোটা অগ্রগতি হয় নাই। সুতরাং আমাদের বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের বাংলা ভাষায় অনুবাদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
মাতৃভাষায় ভাষায় বিজ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রে দেশের বিজ্ঞান সাময়িকী ও সংবাদপত্র একটা বড়ো ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক সিনেমা, সিরিজ তৈরি করা যেতে পারে।
বাংলাভাষায় আন্তর্জাতিক মানের কোনো জার্নাল নেই বললেই চলে।আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল থাকলে বাংলা ভাষায় গবেষণা পত্র প্রকাশের বাধা দূর হবে।
সর্বোপরি আমাদের বাংলা ভাষার বইয়ে বাংলা ইংরেজি মিশ্রিত চর্চা লেখকদের বাদ দিতে হবে
বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চা যেমন আমাদের বাংলাভাষাকে বিশ্বের দরবারে এক অনন্য ও জীবন্ত ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে,তেমনি আমাদের বিজ্ঞান মনস্ক এক উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বময়ী সুপরিচিত করবে।
????সর্বশেষ কবি রামনিধি গুপ্তের ভাষায় বলতে হয়,
“নানান দেশের নানান ভাষা, বিনা স্বদেশীয় ভাষা পূরে কি আশা”।
????Reference :
DailyJuDailyJugantor.com
Online source and self idea.
Md Alauddin,
Department Of Applied Chemistry