ওয়েবিনারঃ ‘বর্তমানে বিজ্ঞান গবেষণায় নারীর ভূমিকা ও প্রতিবন্ধকতা’
১১ই ফেব্রুয়ারি,২০২২ তারিখে International Day of Women and Girls in Science উপলক্ষে চিটাগং ইউনিভার্সিটি সায়েন্টিফিক সোসাইটি (সিইউএসএস) আয়োজন করে ‘বর্তমানে বিজ্ঞান গবেষণায় নারীর ভূমিকা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক ওয়েবিনার। দিবসটি উপলক্ষে সিইউএসএস আমন্ত্রন জানায় কর্মক্ষেত্রে সফল, কর্মঠ, বিজ্ঞামনস্ক চারজন প্রতিভাবান নারীকে – অধ্যাপক ডাঃ বাসনা মুহুরী( বিভাগীয় প্রধান, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ, মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল), ড. তাপসী রায়( অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়),
ড. লায়লা খালেদা (সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), সোনম আক্তার (সহকারী অধ্যাপক, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্টিফিক সোসাইটি–র অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেক্রেটারি জুবাইদা হক বিনতে আলম ও সহকারী ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ারস সেক্রেটারি রওনক রওশন ফিহা এবং টেকনিক্যাল সাপোর্টে ছিলেন সহকারী আইটি সেক্রেটারি মিরহাব। ওয়েবিনারে বক্তারা তাঁদের নিজেদের কর্মময় জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি তুলে ধরেন। এ সময় তাঁরা কালভেদে নারীদের বিজ্ঞানে অগ্রযাত্রার পেছনের অনুপ্রেরণা, বিজ্ঞানে নারীর ভূমিকা আসলেই কতটুকু, গবেষণায় নারীদের প্রতিবন্ধকতাসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। ওয়েবিনারে অধ্যাপক ড: তাপসী ঘোষ রায় ম্যা’ম বলেন, “মেয়েদের সামনে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে পরিবার। গবেষণার জন্যে সে ছেলে হোক বা মেয়ে, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি হলো সময়। যেকোনো আবিষ্কারের পেছনেই গবেষকের অনেক সময়, অনেক মানসিক শ্রম দিতে হয়। যদি কোনো পরিবার তাদের মেয়েকে এই সহযোগীতা করে, সমাজের দোহাইতে তার উপরে নানা অযাচিত চাপ তৈরী না করে, সেক্ষেত্রে একজন নারীও বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে সমাজের জন্য অসামান্য অবদান রাখতে পারবেন। এবং অবশ্যই নারীদেরকে হতে হবে দৃঢ়প্রত্যয়ী, আশেপাশে যত বাধাই আসুক, মনোবল হারানো যাবে না।” সোনম আক্তার ম্যা’ম কথা বলেন গবেষণায় মেয়েদের অংশগ্রহণ এ নিরাপত্তা নিয়ে। তিনি বলেন, “বিজ্ঞান বিষয়ে ল্যাবে কাজ করতে হলে কোনো বাঁধা–ধরা সময়ের মাঝে করা যায় না, দেখা যায় অনেক সময় অনেক পরীক্ষণ থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে অনেক লম্বা সময় জুড়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো মেয়ে এত দীর্ঘ সময় ল্যাবে থাকবে, এরপর সে যে নিরাপদে ঘরে ফিরে আসতে পারবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কোনো কারণে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটেও যআয়, সেক্ষেত্রেও সবাই মেয়েটিকেই দোষারোপ করে, কেন সে গিয়েছিলো, কেন তাকে গবেষণা করতে হবে। এই নিরাপত্তার চিন্তাতেই অনেক বাবা–মা তাদের মেয়ে সন্তানকে দ্রুত বিয়ে দিতে চিন্তা করেন, যার কারণে অনেক নারীই পরবর্তীতে সংসারের চাপে পড়ে আর তাদের গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন না। তাই, গবেষণা ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে আমাদের এই ওভারঅল সোশ্যাল স্ট্রাকচার ও মেন্টালিটির পরিবর্তন করা খুবই জরুরী।” অধ্যাপক ডা: বাসনা মুহুরী ম্যা’ম মেডিকেল সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণের দিকে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “পরিবারের সাপোর্ট একজন নারী শিক্ষার্থীর জন্যে আশীর্বাদের মত। আমার বাবা ও হাজব্যান্ড এর সাপোর্ট ছাড়া আমার মেডিকেলে পড়া এবং পরবর্তীতে এফসিপিএস করা, কোনোটাই হত না। পারিবারিক সকল কাজে আমাকে তারা সাহায্য না করতেন, ইন্সপায়ার না করতেন, হয়ত আমি আজকের পর্যায়ে আসতে পারতাম না। আমি মনে করি, নারীকে নারী হিসেবে বা একজন মেয়ে হিসেবে না দেখে যদি একজন মানুষ হিসেবে দেখে তার মেধার মূল্যায়ন করা হয়, সেক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ের ১০০% নারী শিক্ষার হার ঝরে ১৭% এ নেমে না এসে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অন্তত ৫০% পর্যন্ত আমরা পাবো। নারীদেরকে শুধুমাত্র একটু সাপোর্ট ও সাহস যদি পরিবার থেকে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে তারা বিজ্ঞান গবেষণায় আমাদের দেশকে আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।” অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমন্ত্রিত শিক্ষকগণ এই প্রোগ্রামটির মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীরা আরো বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী ও সাহসী হবার অনুপ্রেরণা পাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন ও ভবিষ্যতে তারাই বিজ্ঞানজগতের নেতৃত্ব দিবেন এই শুভকামনা জানান।