গ্রীন কনজ্যুমারস ডে

প্রতিবছর ২৮শে সেপ্টেম্বর পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার এর ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় গ্রীন কনজ্যুমারস ডে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর ভয়াবহ পরিণতি থেকে থেকে রক্ষা পেতে পরিবেশবান্ধব জীবনধারা পরিচালনা করতে উৎসাহিত করা এই দিবসটির মূল লক্ষ্য। এই দিনটিতে পণ্য ব্যবহার এর ক্ষেত্রে রিসাইকেল-রিইউস-রিডিউস এই তিনটি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে।

গ্রীন কনজ্যুমার বলতে সাধারণত তাদেরকেই বোঝানো হয় যারা পরিবেশ এর কথা মাথায় রেখে পণ্য বাছাই করার ক্ষেত্রে পণ্যটি পরিবেশবান্ধব কিনা তা যাচাই করে পণ্যটি বাছাই করে থাকেন। যেমন- একজন গ্রীন কনজ্যুমার অযথা প্লাস্টিক এর ব্যবহার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে থাকবেন, গাড়ির বদলে হাইব্রিড গাড়ি অথবা সাইকেল ব্যবহারে আগ্রহী হবেন, বিদ্যুৎ ও পানি অপচয় করবেন না, যথাযথ নিয়মে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে থাকবেন, হেম্প কিংবা অর্গানিক কটন থেকে তৈরি পোষাক বাছাই করবে ইত্যাদি। গ্রীন কঞ্জাম্পশন এর ধারণা মূলত ১৯৭০ এর দিকে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। যেমন- ১৯৭৩ সালের ওয়েল ক্রাইসিস এর পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো ফসিল ফুয়েল পরিবর্তে গ্রীন এনার্জি ব্যবহার করা শুরু করে। John Elkington এর বই “The Green Consumer’s Guide” এর মোতাবেক নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলাকে গ্রীন কঞ্জাম্পশন বলা হয়ঃ

১. এমন পণ্য যা তার ভোগকারী বা অন্য কারো স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

২. যেসব পণ্য তৈরি, ব্যবহার এবং নিষ্পত্তির সময় বেশি রিসোর্স এর প্রয়োজন।

৩. এমন পণ্য যা বিরল কোনো প্রাণী বা প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে তৈরি।

৪. যেসব পণ্য পরিবেশ এর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

গ্রীন কনজ্যুমার বিহেভিয়ার নানাভাবে পরিবেশকে উপকৃত করে থাকে। গ্রীন কনজ্যুমাররা সাধারণত রিসাইকেল করা ম্যাটারিয়াল থেকে কিংবা নবায়নযোগ্য রিসোর্স থেকে তৈরি পণ্য ব্যবহার করে থাকেন, যা সাস্টেনেবল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। গ্রীন কনজ্যুমাররা এমন সব পণ্য ব্যবহার করে থাকেন যার কার্বন ফুটপ্রিন্ট কম, যা বিশেষভাবে আমাদের গ্রীনহাউজ গ্যাস এমিসন কমিয়ে আনতে পারে। গ্রীন কনজ্যুমার বিহেভিয়ার সাস্টেইনেবল কৃষি ব্যাবস্থা প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গিয়েছে পরিবেশবান্ধব পন্য ব্যবহার করার প্রবণতা বেশ কয়েকটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে। পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা তার মধ্যে অন্যতম। মানুষ হিসেবে আমরা যেকোনো বিষয় খুব সহজেই শিখতে পারি, তাই পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা পরিবেশ দূষণ এর বিরুদ্ধে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে থাকে। মানুষের মধ্যে পরিবেশবাদী মনোভাব গড়ে তোলা পরিবেশবান্ধব কাজকর্মগুলোকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করে থাকে। এছাড়াও পরিবেশবান্ধব পণ্য বাছাই করার ক্ষেত্রে একজন মানুষ এর একক চেষ্টা কিভাবে পরিবর্তন আনতে পারে সে ব্যাপারে তথ্য পরিবেশন করাও বেশ কার্যকর। পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারকে সামাজিক আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে। Harvard Business Review-এর মতে অনলাইন ভোক্তাদের যখন বলা হয় যে সবাই পরিবেশবান্ধব পণ্য ক্রয় করছে তখন তাদের কমপক্ষে ১টি পরিবেশবান্ধব পন্য কেনার পরিমান ৬৫℅ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

পরিবেশবান্ধব পণ্য ক্রয়ের সময় কথা ও কাজের অমিল একটি বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অধিকাংশ মানুষই কি পণ্য ব্যবহার করছে এবং তা পরিবেশ এর উপর কি প্রভাব ফেলছে তা সম্পর্কে শংকা প্রকাশ করে থাকলেও খুব কম সংখ্যক মানুষই সবসময় পরিবেশেবান্ধব পণ্য ক্রয়ের প্রচেষ্টা চালান। একে “ইনটেনশন-একশন গ্যাপ” বলা হয়ে থাকে। কথা ও কাজের এই অমিলকে কমিয়ে আনার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশ সম্পর্কিত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিরাও বিভিন্ন পরিবেশবাদী ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে তাদের ভোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করে করে তুলতে পারে। Unilever, Tesla এবং IKEA -এর মত কোম্পানিগুলোও সফলভাবে এ ধরনের উদ্যোগ অতীতে গ্রহণ করেছে।

গ্রিন কনজ্যুমার বিহেভিয়ার এর বিষয়গুলোকেই তুলে ধরার জন্যই এই দিবসটি উদযাপন করা হয়ে থাকে। আমরা সবাই একই প্রকৃতির অংশীদার, তাই চলুন আজকের এই দিনে আমরা সকলে গ্রিন কনজ্যুমার হওয়ার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।

References:

1.https://hbr.org/2019/07/the-elusive-green-consumer

2. Li, M. (2020). Review of Consumers’ Green Consumption Behavior. American Journal of Industrial and Business Management

3. Griskevicius, V., Tybur, J. M., & Van den Bergh, B. (2010). Going green to be seen: status, reputation, and conspicuous conservation. Journal of personality and social psychology, 98(3), 392.

4. Charter, M., & Polonsky, M. J. (1999). Green marketing and the Australian consumer: Drivers of recycling and organic product purchase intention. Journal of Marketing Management, 15(6), 557-577.

5. Tuomisto, H. L., Hodge, I. D., Riordan, P., & Macdonald, D. W. (2012). Does organic farming reduce environmental impacts?–A meta-analysis of European research. Journal of environmental management, 112, 309-320.

Written by:

Nirjhar Nakib

General Member, CUSS

Team: Phoenix

Department of Fisheries

Session: 2018-2019

Poster credit :

Tanjina Rahman Chuti

General Member, CUSS

Team : Up to Atom

Department of Oceanography

Session : 2018-19