গ্রীষ্মের দাবদাহে যেন জ্বলছে পুরো দেশ
গ্রীষ্মের দাবদাহে যেন জ্বলছে পুরো দেশ।
দেশের ১১টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। এসব অঞ্চলের তাপমাত্রা খুব বেশি না হলেও বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা বেশি না হলেও কেন বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে, এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন কয়েকজন আবহাওয়াবিদ।
আবহাওয়াবিদদের ভাষ্যমতে, মৃদুতাপপ্রবাহ হলো ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপপ্রবাহ। দেশের গড় তাপমাত্রা বর্তমানে ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিদ্যমান,এই মৃদুতাপপ্রবাহেও অতিরিক্ত গরম অনুভূত হওয়ার মূল কারণ বাতাসে আর্দ্রতা থাকা। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ স্থানে দেখা যাচ্ছে আর্দ্রতা তুলনামূলক কম তবুও খুবই বেশি পরিমাণে গরম অনুভব হচ্ছে। তাছাড়া বর্ষায় কয়েক দিন বৃষ্টি বেশি হলে তাপমাত্রা কমে যায়। এখন কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হলেও সেভাবে কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। যার কারণে তাপমাত্রা কমছে না। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে দুর্বলভাবে অবস্থান করছে। সে কারণে বৃষ্টি কম হচ্ছে।
☀️ গ্রীষ্মের এই তাপদাহের জন্য মূলত আমরাই দায়ী
তাপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বনাঞ্চল উজার, পরিবহণ ও কলকারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি মানবসৃষ্ট কারণে প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টন বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড।কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) ও মিথেনের মতো বিষাক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস, বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে পড়ে। আর এই আটকে পড়া তাপই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। এসব বিষাক্ত গ্যাস ধীরে ধীরে ক্ষয় করছে বায়ুমন্ডলের গুরুত্বপূর্ণ স্তর ওজোন স্তর, যার ফলস্বরূপ সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি সরাসরি ভূমন্ডলে এসে পড়ছে। বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। প্রতি বছর বিশ্বের মোট কার্বন নির্গমনের ৭০ শতাংশের বেশি নির্গমন হয় কেবল শক্তি উৎপাদনে। এবং এর প্রধান নির্গমনকারীরা হলো: আমেরিকা, চীন, ,ইউরোপ।
বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব:
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ধারা ৬ অনুযায়ী, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া সৃষ্টিকারী যানবাহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও দীর্ঘ ২৫ বছর পরও কোনো কার্যকারিতা পায়নি। বর্তমানে ঢাকা শহরে হাজার হাজার ক্ষতিকর ধোঁয়া সৃষ্টিকারী যানবাহন চালু রয়েছে। অথচ এসব যানবাহন থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর ধোঁয়া বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সর্বোপরি বলা যায় যে, আমরা কার্বন নিঃসরণ রোধ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্যে এখন আর “গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান ” স্লোগানটি শোনা যায়না। এভাবে চলতে থাকলে কয়েকশ বছর পর আমাদের দেশ থেকে উপকূলবর্তী ২৩টি জেলা হারিয়ে যাবে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব কেবলমাত্র বায়ুমণ্ডলীয় উষ্ণতা ও সমুদ্র তলের উচ্চতার পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত নয়, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আজ আবহাওয়ার গতি প্রকৃতির আগাম পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে এবং জলবায়ুগত দুর্যোগ যেমন খরা, বন্যা ও ঝড় প্রভৃতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গবেষকগণ ও পরিবেশবিদেরা বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলোতে সবচে’ বেশি গুরুত্ব প্রদান করছেন:
১. মানব সচেতনতা।
২. গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি রোধ।
৩. সিএফসি নির্গত হয় এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমিয়ে আনা।
৪. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ।
৫. সামাজিক বনায়ন।
এই গরমে দৈনন্দিন জীবনে কি কি করা উচিত এবং অনুচিত:
✔️ যা যা করা উচিত:
১. পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরা উচিত
২. বাইরে বের হলে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা উচিত। এক্ষেত্রে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করা উচিত।
৩. ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষার্থে ব্যবহার করা উচিত SPF যুক্ত সান্সক্রিন।
৪. বেশি পরিমাণে পানি এবং তাজা ফলের রস পান করা উচিত।
৫. রমজানে রোজাদারদের ইফতারে কোমল পানীয়ের পরিবর্তে পানি, গ্লুকোজ বা স্যালাইন এবং ফল খাওয়া উচিত।
৬. মাংসের পরিবর্তে শাকসব্জি খাওয়া বেশি উত্তম।
৭. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বেশি বেশি গাছ লাগানো।
আশেপাশের পরিবেশ শীতল রাখতে পারে একমাত্র গাছ।বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে এক ইঞ্চি জায়গা খালি না রেখে বাড়ি নির্মাণ উচিত নয়।বাড়ির আশপাশ প্রশস্ত রেখে গাছপালা লাগানো উচিত।যা গ্রীষ্মে পরিবেশ রাখবে শীতল।
✖️ যা যা করা অনুচিত:
১. বেশি সময় ধরে রোদে অবস্থান করা।
২. পানি স্বল্পতায় নিজেকে রাখা। প্রস্রাবের রঙ খেয়াল রাখা উচিত, প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন পানি স্বল্পতার কারণ।
৩. তৃষ্ণা মেটাতে কোমল পানীয় পান করা।
অতিরিক্ত গরম হতে পারে হিটস্ট্রোকের কারণ:
বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। কিন্তু অতিগরমের তাপমাত্রায় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কাজ বন্ধ করে দেয় আর তখনই হিটস্ট্রোক ঘটে। এর ফলে ঘাম বন্ধ হয়ে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশিরভাগ হিটস্ট্রোকের শিকার হয়।
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে শীতল কোনো কক্ষে রেখে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য ঠান্ডা কাপড় দিয়ে গা মুছে দেয়া উচিত। তাপমাত্রা কমাতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আইসপ্যাক লাগানো উচিত।
আসুন আমাদের যাপিত জীবনকে দুর্বিষহ করার পরিবর্তে সুস্থ এবং স্বাভাবিক করে তুলি।
প্রত্যেকে অন্তত ২ টি করে গাছ লাগাই, নিজেরাই নিজেদের অবস্থান থেকে নিজের পরিবেশকে সবুজ, শীতল এবং বাসযোগ্য করে তুলি। তাহলেই পারব আগামী শিশুর জন্য একটা নিরাপদ পরিবেশ উপহার দিতে।
#cuss
#hot_summer
References:
1.https://shorturl.at/GHK27
2.https://www.prothomalo.com/bangladesh/z6q6hcyyhq
3.https://shorturl.at/cjqsR
3.https://bengali.cri.cn/…/5e9fc3c8-882a-bb9c-1db4…
4.https://www.protidinersangbad.com/…/editor-choice/312482
✏️ Written by:
Efrin Anowar
General Member, CUSS
Team : Odyssey
Department Of Zoology
Session : 2019-20
Tag:cuss