বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং- এর প্রয়াণ দিবস।
আজ ১১ মার্চ, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং- এর প্রয়াণ দিবস। ১৯৫৫ সালের এই দিনে তিনি লন্ডনে তাঁর নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্টিফিক সোসাইটি এই মহান বিজ্ঞানীকে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।
স্কটল্যান্ডের আইরশায়ারের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম দারভেল। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্টে এখানকার একটি কৃষক পরিবারের ঘর আলো করে জন্ম নেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। তিনি ছিলেন হিউ ফ্লেমিং এবং তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী গ্রেস স্টার্লিং মরটন-এর চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয়।
ফ্লেমিং এর শিক্ষাজীবনের সূচনা ঘটে লাউডন মুর স্কুলে এবং পরবর্তীতে তিনি ডারভেল স্কুলে স্থানান্তর করেন। এরপর ১৮৯৪ সালে একটি শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে তাঁর কিলমার্নক একাডেমীতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়। ১৮৯৫ সালে তিনি চলে যান লন্ডনে, সেখানে শিক্ষালাভ করেন রয়্যাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। পরবর্তীতে ১৯০৩ সালে তাঁর ভাই টমের উপদেশে তিনি সেইন্ট মেরী’স মেডিকেল স্কুলে চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে ভর্তি হন এবং ১৯০৬ সালে শ্রেষ্ঠত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯০৮ সালে তিনি ব্যাকটেরিওলজি বিষয়ে স্বর্ণপদকসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯০৬ সালে ফ্লেমিং তাঁর এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পরপরই সেইন্ট মেরী’স হসপিটালের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এলমরোথ রাইটের সহকারী হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে ব্যাকটেরিওলজিতে ডিগ্রি লাভের পর সেখানে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত থাকেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট এবং পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে রয়্যাল আর্মি মেডিকেল কর্পসে ক্যাপ্টেন নিযুক্ত হন। ১৯১৮ সালে তিনি ফিরে আসেন তাঁর পুরনো কর্মস্থলে।
জীবাণুবিদ্যার প্রতি তাঁর অসীম আগ্রহ থেকে তিনি যুদ্ধ থেকে ফেরার পরপরই আবার গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর বিখ্যাত দুইটি আবিষ্কার, লাইসোজাইম এবং পেনিসিলিন, বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথে অশেষ ভূমিকা রাখছে; যদিও তাঁর এই আবিষ্কারগুলো ছিল দুর্ঘটনার ফসল।
তিনি লাইসোজাইম আবিষ্কার করেন ১৯২১ সালে ভুলক্রমে তাঁর ব্যাকটেরিয়ার কালচারের উপর সর্দি ফেলার কারণে। তিনি দেখতে পান প্লেটের যে জায়গাতে সর্দি এসে পড়েছিল সেখানে কোনো ব্যাকটেরিয়া নেই। এভাবেই আবিষ্কার করে ফেলেন প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক লাইসোজাইম যা আমাদের নাকের মিউকাস, মুখের লালা এবং চোখের জলে পাওয়া যায়।
কিন্তু তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কারটি আসে ১৯২৮ সালে। লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় তিনি টাইফয়েড রোগের প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা করছিলেন। এই সূত্রে তিনি কাজ করছিলেন স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে। একবার তিনি ভুল করে পেট্রিডিশগুলো পরিষ্কার না করে ফেলে রাখেন কয়েকদিন। পরবর্তীতে পেট্রিডিশগুলো তাঁর নজরে আসলে তিনি নীলাভ কিছু একটা দেখতে পান সেগুলোর উপর। তিনি এও লক্ষ্য করেন যে, তার আশেপাশে কোনো ব্যাকটেরিয়াও জন্মাচ্ছে না। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৮ তারিখে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এগুলো পেনিসিলিয়াম নামক ছত্রাকের প্রভাব। তিনি বুঝতে পারলেন, এই ছত্রাক দ্বারা ক্ষরিত রাসায়নিক পেনিসিলিন হলো ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করার উপায়। তিনি দেখতে পান এই রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতিতে স্কারলেট ফিভার, নিউমোনিয়া, ডিপথেরিয়া আর মরণঘাতী মেনিনজাইটিস রোগের জীবাণুও জন্মাতে পারে না। এরপর ১৯২৯ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে যান রাসায়নিক পদার্থটিকে ছত্রাক থেকে আলাদা করতে। তাঁর প্রচেষ্টায় শামিল হন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই রসায়ন বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড ফ্লোরি এবং আর্নেস্ট বরিস চেইন। এই তিনজন মিলে আবিষ্কার করেন পেনিসিলিনের রাসায়নিক কাঠামো এবং তার পৃথকীকরণ। ১৯৪১ সাল থেকেই চিকিৎসাক্ষেত্রে এর ব্যবহার শুরু হয়ে গেল। এটি জগৎ জুড়ে পরিচিত হল “বিশ শতকের বিস্ময়” হিসেবে।
১৯৪৪ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ভূষিত হন নাইট উপাধিতে এবং ১৯৪৫ সালে বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড ফ্লোরি এবং আর্নেস্ট বরিস চেইনের সাথে পেনিসিলিন আবিষ্কারের জন্য তাঁদের যৌথভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল দ্বারা পুরষ্কৃত করা হয়।
ফ্লেমিং ১৯৫৫ সালের ১১ মার্চ লন্ডনে তাঁর নিজগৃহে হৃদরোগজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং তাঁকে সেইন্ট পল’স ক্যাথিড্রালে সমাহিত করা হয়।
#cuss
#Alexandar_Fleming
References :
1. https://www.nobelprize.org/prizes/medicine/1945/fleming/biographical/
2. https://www.sciencehistory.org/historical-profile/alexander-fleming
3. https://www.bbc.co.uk/history/historic_figures/fleming_alexander.shtml
4. https://www.twinkl.com/teaching-wiki/sir-alexander-fleming
5. https://microbiologysociety.org/membership/membership-resources/outreach-resources/antibiotics-unearthed/antibiotics-and-antibiotic-resistance/the-history-of-antibiotics.html
✏️Content Credit :
✒️Written By :
Oli Chakma
Assistant Publication and Publicity Secretary,
Department of Genetic Engineering and Biotechnology
Sesion : 2019-2020
Poster Credit :
Raisa Nuzhat
Assistant IT secretary,
Computer Science & Engineering
Session : 2019-20