বিশ্ব চাগাস রোগ দিবস
১৪ এপ্রিল, ২০২৩: “বিশ্ব চাগাস রোগ দিবস” পালিত হয়।
চাগাস রোগ কী?
-এটি একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ, যা একটি নির্দিষ্ট রক্তপায়ী পরজীবীর দ্বারা সংক্রমিত হয়।পরজীবী ট্রাইপানোসোমাক্রিজু ট্রায়াটোমাইন বাগ এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় এই রোগ, যা ‘কিসিং বাগ’ নামেও পরিচিত। রোগটিকে আমেরিকান ট্রিপ্যানোসোমিয়াসিস, সাইলেন্ট ডিজিজ বা সাইলেন্সড ডিজিজও বলা হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পতঙ্গ পরজীবীগুলো অঞ্চলভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন স্থানীয় নামে পরিচিত। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য, মধ্য আমেরিকায়~“চিনচে”, ভেনিজুয়েলায়~“চিপো”, ব্রাজিলে~“বার্বেইরোনাপিত”, কলম্বিয়ায়~“পিটো”, এবং আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি ও প্যারাগুয়েতে~ “ভিনচুকা”।
চাগাস রোগের নামকরণ :
চাগাস রোগের নামকরণ করা হয়েছে কার্লোস রিবেইরো জাস্টিনিয়ানো চাগাস এর নামানুসারে, যিনি একজন ব্রাজিলিয়ান চিকিৎসক এবং গবেষক। তিনি ১৯০৯ সালের ১৪ এপ্রিল এই রোগটি প্রথম চিহ্নিত করেছিলেন।
চাগাস রোগের সংক্রামকতার বিস্তৃতি:
এই রোগটি সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র লোকদেরকে প্রভাবিত করে যারা দরিদ্র স্বাস্থ্যবিধি অবস্থার অধীনে এবং যেখানে জনসংখ্যার সঞ্চালন অধিক হারে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক একটি বৈশ্বিক গবেষণার পরিসংখ্যানে হিসেব করে দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ মানুষ চাগাস রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ২০০৬ সালে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র এক বছরের মধ্যেই প্রায় ১২৫০০ লোকের মৃত্যু ঘটেছে। যদিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোগটির সংক্রামকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে; তবে মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার মতো অঞ্চলের লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। বর্তমানে ২১ টি ল্যাটিন আমেরিকান দেশে এই রোগটি এন্ডেমিক হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এটি বর্তমানে ল্যাটিন আমেরিকার প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করেছে এবং ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক, হজম বা স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি তৈরি হয়েছে বা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চাগাস রোগের লক্ষণ:
এই রোগ সংক্রমনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে খুব একটা লক্ষণ বুঝা না গেলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়; যেমন:জ্বর, চোখের পাতা বেগুনিবর্ণ হয়ে ফুলে যাওয়া, পেশিব্যাথা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া,বর্ধিত লসিকা গ্রন্থি এবং কামড়ানোর জায়গায় সাধারণ ফোলা। সংক্রমনের ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে রোগীর অবস্থা ক্রোণিক পর্যায়ে পৌঁছায়। এই সংক্রমিত রোগের দ্বারা গুরুতর অবস্থায় হার্টের রোগ, হার্ট ফেইলিউর, হার্টের ভেন্ট্রিকলসের বৃদ্ধি , খাদ্যনালী ও কোলনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা ধীরে ধীরে আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
????চাগাস রোগের নিয়ন্ত্রণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা:
যদিও চাগাস রোগ প্রতিরোধ করার জন্য এখনো কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি, তবে পরজীবীকে মেরে ফেলার জন্য, বেনজনিডাজল বা নিফুর্টিমক্স দিয়ে চাগাস রোগের চিকিৎসা করা যেতে পারে। উভয় ওষুধই রোগ নিরাময়ে প্রায় ১০০% কার্যকর, যদি তা সংক্রমণের ক্ষেত্রে তীব্র পর্যায়ে যাওয়ার পূর্বে খুব শীঘ্রই রোগীর শরীরে দেওয়া হয়। তবে, গর্ভবতী নারী এবং যে সকল মানুষ কিডনি ও লিভার ফেইলিউর সমস্যায় ভুগছেন, তারা এই প্রতিষেধক নিতে পারবে না।
ট্রান্সফিউশন এবং টিস্যু ও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার রোধে রক্ত স্ক্রীনিং এর মাধ্যমে বিশ্বে সংক্রমিত জনসংখ্যা সনাক্তকরণের মাধ্যামে এবং আক্রান্ত রোগীদের জন্য যথাযথ নিরাময় ব্যবস্থা করার মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
এছাড়াও নিজ নিজ বাসস্থান, আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, কীটনাশক স্প্রে, ভেক্টর সংক্রমণ রোধ, ব্যক্তিগত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যেমন, বিছানায় মশারী টানানো, বাড়ির জানালার নেটের ব্যবহার, খাদ্য তৈরি, পরিবহন ও দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজে ব্যক্তি সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমেও এই রোগ কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিশ্ব চাগাস রোগ দিবস :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO), তার ৭২ তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে ২৪ মে, ২০১৯ তারিখে চাগাস রোগ দিবসের উপাধি অনুমোদন করেছে। চ্যাগাস রোগ ( আমেরিকান ট্রিপ্যানোসোমিয়াসিস বা সাইলেন্ট বা সাইলেন্সড রোগ) এবং এর রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান ও পদক্ষেপ সম্পর্কে বিশ্বের জনগণের মধ্যে জনসচেতনতা এবং দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল বিশ্ব চাগাস রোগ দিবস পালন করা হয়। এটি WHO দ্বারা চিহ্নিত ১১টি সরকারী বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য প্রচার (Global Public Health Campaigns) এর একটি।
২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল, প্রথম বারের মত বিশ্ব চাগাস রোগ দিবস পালন করা হয়।
#CUSS
#WORLD_CHAGAS_DISEASE_DAY
References :
1)https://www.who.int/…/chagas-disease-(american…
2)https://currentaffairs.adda247.com/world-chagas-disease…/
3)https://www.news18.com/…/world-chagas-disease-day-2022…
4)https://www.eurosurveillance.org/…/ese.16.37.19968-en
5)https://www.nature.com/articles/nature09221
Content Credit :
Written By :
Kakon Saha
General Member, CUSS
Team : Pterosaurs
Institute of Marine Sciences
Session : 2018-19
Poster Credit :
Tanjina Rahman Chuti
General Member, CUSS
Team : Atom
Department of Oceanography
Session: 2018-19
Tag:cuss