বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস ২০২৩
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস ২০২৩
নীলগাই, বনমহিষ,পাহাড়ি ঘুঘু, ঈগল পেঁচা। নামগুলো চেনা চেনা লাগলো না? কোথাও যেন দেখেছি বা শুনেছি। হ্যা, ঠিক মনে পড়েছে। ডিসকাভারি কিংবা ইউটিউবে দেখেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তাদের নাকি আমরা আর দেখবোনা৷ তারা নাকি হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। এ কেমন কথা? হ্যা, এটাই কথা। আমাদের মানবজাতি ও প্রকৃতির নানা কারণে আমরা তাদের হারিয়ে ফেলছি চিরতরে। প্রকৃতি হয়তো আমাদের হাতে নেই। কিন্তু নিজেরা তো পাড়ি ওদেরকে বাঁচাতে। ফিরিয়ে আনতে আমাদেরই মাঝে। এই প্রচেষ্টায় ৩ মার্চ বিশ্বব্যাপী বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালিত হয়ে আসছে বিগত ১০ বছর ধরে।
আজকে এই বিশেষ দিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্টিফিক সোসাইটি পৃথিবীর সকল বন্যপ্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করছে।
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের ইতিহাস:
২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৮ তম অধিবেশনে থাইল্যান্ড আন্তৰ্জাতিক বিলুপ্তপ্ৰায় বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের বাণিজ্য সম্মেলনে ৩ মার্চকে, বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানায়। বিশ্বের বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদকূলের প্রতি গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা এই দিবসের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বন্যপ্রাণীদের বর্তমান অবস্থা :
মাত্র প্রায় ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত বাংলাদেশে আছে ৩৭ প্রজাতির উভচর, ১০৯ প্রজাতির অভ্যন্তরীণ ও ১৭ প্রজাতির সামুদ্রিক সরীসৃপ, ৩৮৮ প্রজাতির আবাসিক ও ২৪০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এবং ১১০ প্রজাতির অন্তর্দেশীয় ও ৩ প্রজাতির সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী। বর্তমানে দেশের অন্তর্দেশীয় ও আবাসিক ৮৯৫ প্রজাতির (২৬৬টি স্বাদুপানি ও স্বল্পলোনাপানির মাছসহ) মধ্যে ২০১ প্রজাতি বিভিন্ন ধরনের হুমকির সম্মুখীন এবং ২২৩ প্রজাতির অবস্থা অনিশ্চিত ও আশঙ্কাজনক। বিগত ১০০ বছরে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে এক ডজনের বেশি বন্যপ্রাণী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এক শিংবিশিষ্ট গন্ডার, জাভান গন্ডার, এশিয়ান দু’শিংবিশিষ্ট গন্ডার, গাউর, বেন্টিং, বুনো মহিষ, হরিণ, নীলগাই, নেকড়ে, নুকতা হাঁস, ময়ূর এবং বাদার কুমির ইত্যাদি। বাংলাদেশে উভচর প্রাণীদের যে ২২টি প্রজাতি রয়েছে এর মধ্যে যদিও ৮টির অবস্থা আশঙ্কাজনক হিসেবে তালিকাবদ্ধ হয়েছে।
পাখি, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী বিলুপ্তির তালিকা থেকে বাদ যায়নি কোনটাই।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ :
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত আইন। আইনটি ১০ জুলাই, ২০১২ তারিখে রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে যা ১০টি অধ্যায় এবং ৫৪টি ধারায় বিভক্ত। আইনের সাথে চারটি তফসিল যুক্ত করা হয়েছে।
ধারাসমূহ:
আইনের ৬ ধারা মোতাবেক এই আইনের তফসিলে উল্লেখিত বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী শিকার বা বন্যপ্রাণী, মাংস, ট্রফি, অসম্পূর্ণ ট্রফি, বন্যপ্রাণীর অংশবিশেষ অথবা এসব হতে উৎপন্ন দ্রব্য দান, বিক্রয় বা কোনো প্রকারে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আইনের ৪১ ধারা মোতাবেক আরও উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করলে বা উক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা চনা প্রদান করে থাকলে এবং উক্ত সহায়তা বা প্ররোচনার ফলে অপরাধটি সংঘটিত হলে, উক্ত সহায়তাকারী বা প্ররোচনাকারী তাহার সহায়তা বা প্ররোচনা দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দন্ডে দণ্ডিত হইবেন।
তফসিলসমূহ:
১)তফসিল ১ এ ১৪টি ব্যাঙ, ৯৬টি কচ্ছপ এবং সরীসৃপ, ৫৭৮টি পাখি, ১১০টি স্তন্যপায়ী, ২৫টি মাছের প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।
২)তফসিল ২ এ ৭২টি ব্যাঙ, কচ্ছপ, সরীসৃপ এবং উভচর, ৪৪টি পাখি, ৩টি স্তন্যপায়ী, ২৭টি মাছ, ৩২টি প্রবাল, ১৩৭টি শামুক ঝিনুক, ২২টি কাঁকড়া এবং লবস্টার, ৫৯টি প্রজাপতি ও মথ এবং ২৪টি কীটপতঙ্গের প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।
৩)আইনের তফসিল ৩-এ মোট ৬টি ভারমিন প্রজাতির নাম উল্লেখ আছে। সেগুলো হচ্ছে গেছো ছুঁচো, কালো ইঁদুর, নেংটি ইঁদুর, ধাড়ি ইঁদুর, বড় ইঁদুর এবং মেঠো ইঁদুর।
৪)আইনের তফসিল ৪-এ মোট ৫৪টি উদ্ভিদকে সংরক্ষিত উদ্ভিদ (Protected plants) ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ আইনের ৬ ধারা মোতাবেক এই ৫৪ প্রজাতির উদ্ভিদ ইচ্ছাকৃতভাবে উঠানো, উপড়ানো, ধ্বংস বা সংগ্রহ করা যাবে না।
⛔ শাস্তি:
আইনের ৩৬ ও ৩৭ ধারায় বাঘ, হাতি, চিতাবাঘ ইত্যাদি অপরাধ করলে আইনের ৩৬ ধারায় দণ্ড- সর্বনিম্ন ২ বছর, সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ১ লাখ, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। সংরক্ষিত উদ্ভিদ সংক্রান্ত ৬ নং ধারা লঙ্ঘন করলে ৩৯ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং পুনরায় একই অপরাধ করলে শাস্তি দ্বিগুণ হবে।
✅ বন্যপ্রাণী দিবস ২০২৩ এর প্রতিজ্ঞা :
আসুন আজকের এই দিনে আমরা সবাই শপথ নিই বন্যপ্রানীদের জন্য পৃথিবী টা সুন্দর করে গড়ে তোলার। বেচে থাকুক ওদের আগামী। নিজে এবং অন্যকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এর গুরুত্ব বুঝাই এবং সেগুলো পালন করি।
রেফারেন্স সমূহ:
http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-1102.html
https://wildlifeday.org/en/node/25
https://bn.banglapedia.org/index.php/%E0%A6%AC%E0%
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%
https://www.un.org/en/observances/world-wildlife-day
Written by:
Shishir Dutta
Department Representative
Department of Soil Science
University of Chittagong
Poster credit:
Farhana Sultana Ananna