মানুষের মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী এবং বুদ্ধিবৃত্তি
অনুভবের অন্তরালে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী এবং বুদ্ধিবৃত্তির ব্যাখ্যার জন্য গত কয়েক দশক ধরেই বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আশ্রয় নিয়েছেন। এ ব্যাপারে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী রজার পেনরোজের ভূমিকা অগ্রগণ্য। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত, Emperor’s New Mind, বইটিতে এ ব্যাপারে তিনি সর্বপ্রথম আলোকপাত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অসংখ্য নিউরন কোষের মাইক্রো টিউবিউলের অভ্যন্তরে বস্তুকণার কোয়ান্টাম সুপারপজিশনের পরিবর্তনের ফলে মস্তিষ্কে অনুভবের (consciousness) প্রকাশ ঘটে। তাঁর মতে, নিউরনের মাইক্রো টিউবিউলের অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং জটিল গঠন বিন্যাস বস্তুকণার কোয়ান্টাম অবস্থাকে ধরে রাখার অনুকূলে কাজ করে। মস্তিষ্কের অনুভূতির এই অভিনব “কোয়ান্টাম” ব্যাখ্যা অধিকাংশ বিজ্ঞানী মেনে নিতে পারেন নি। এর প্রধান কারণ হলো, বস্তুকণার কোয়ান্টাম অবস্থা ধরে রাখতে হলে পরম শূন্যতার কাছাকাছি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই অবস্থা ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাছাড়া এর স্বপক্ষে কোন পরীক্ষামূলক প্রমাণ ছিল না।
অতি সম্প্রতি, আয়ারল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজের ইনস্টিটিউট অব নিউরো সাইন্সের বিজ্ঞানীরা মানুষের ব্রেনের নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স স্পেকট্রোস্কপি করে দেখেছেন, মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীতে কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্টের ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে জার্নাল অফ ফিজিক্স কমিউনিকেশনসে(অক্টোবর, ২০২২) তাঁরা একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন।
এখানে বলে রাখি, কোয়ান্টাম জগতে একটি বস্তুকণা অন্য একটি দূরবর্তী বস্তুকণার সাথে অদৃশ্য বন্ধনে বাঁধা থাকতে পারে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের পরিভাষায় একে বলা হয়, এন্টেঙ্গেলমেন্ট। সোজা বাংলায় এর মানে হলো, পরস্পর জড়িয়ে থাকা। পদার্থবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, প্রকৃতিতে দু’টি বস্তুকণার উদ্ভব এমনভাবে হতে পারে, যেখানে একটি বস্তুকণার কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করলে অন্য বস্তুকণাটির কোয়ান্টাম চরিত্রও জানা যায়। যদিও আপাতদৃষ্টিতে দুটি বস্তুকণার মধ্যে সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য বন্ধনে কোয়ান্টাম জগতে একটি বস্তুকণা অন্য একটি দূরবর্তী বস্তুকণার সাথে জড়িয়ে থাকতে পারে। এর ফলে একটি বস্তুকণার স্পিন জানা হয়ে গেলে, দূরবর্তী বস্তুকণার স্পিন বলে দেওয়া সম্ভব। স্পিন হলো বস্তুকণার সামগ্রিক কৌণিক ভরবেগের একটি পরিমাপ। এটি বস্তুকণার একটি অন্যতম কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য।
ট্রিনিটি কলেজের বিজ্ঞানীরা, ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI) করে মানুষের মস্তিষ্কের জলীয় অংশের প্রোটন স্পিনের পরিমাপ করেছেন। এরপর তাঁরা এন্টেঙ্গেল্ড প্রোটনের সন্ধান করে হার্টবিটের ইসিজির সাথে মস্তিষ্কের প্রোটন স্পিনের MRI এর সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, মস্তিষ্কের প্রোটনের এন্টেঙ্গেলমেন্টের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। তবে এন্টেঙ্গেলমেন্টের জন্যই মস্তিষ্কে অনুভবের প্রকাশ এবং বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটে কিনা, সেটা হলফ করে বলার মত সময় এখনো আসেনি। অনুভবের নীল নকশা এখনও রহস্যের অন্তরালেই রয়ে গেছে।
মানুষের মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী এন্টেঙ্গেলমেন্টের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা গেলে, ভবিষ্যতে একে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতির কোয়ান্টাম কম্পিউটারের
কিউবিটস তৈরি করার কাজটি সহজ হয়ে যাবে।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন:
https://www.sciencedaily.com/releases/2022/10/221019090732.htm