হিপনিক জার্ক (Hypnic Jerk)
খেয়াল করে দেখেছেন কখনো, আমরা ঘুমের মধ্যে প্রায়শই আচমকা ঝাঁকুনি অনুভব করি?
আবার কখনো স্বপ্নের মাঝে কোনো উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাচ্ছি?
বিজ্ঞানের ভাষায় এই ঝাঁকুনিকে বলা হয় হিপনিক জার্ক (Hypnic Jerk) বা স্লিপ স্টার্ট (Sleep Start), স্লিপ টুইচ (Sleep Twitch), মাইওক্লোনিক জার্ক (Myoclinic Jerk), হিপ্নাগোগিক জার্ক (Hypnagogic Jerk) নামেও পরিচিত।
এটা খুব সাধারণ একটি ঘটনা, বিশ্বের প্রায় ৬০-৭০% মানুষের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটে থাকে এবং তাদের ভেতরে ১০% মানুষের সাথে তো প্রতিদিন ঘটে।
কারণ
আমাদের দেহ ঘুমিয়ে যাওয়ার আগেই যদি স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দেয় তখন আমাদের মস্তিষ্ক অনেকটা ঝাঁকি দিয়ে আমাদের জাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। হিপনিক জার্ক দ্রুত হৃৎস্পন্দন, দ্রুত শ্বাস, ঘাম অনেক সময় “শক” বা শ্যূনে পড়ে যাবার মতো এক অদ্ভুত সংবেদনশীল অনুভূতির সংমিশ্রণ। কখনো কখনো আমাদের ঘুম ভাঙার কারণও হয়ে থাকে হিপনিক জার্ক। এটি কোনো স্বচ্ছ স্বপ্নের অভিজ্ঞতা বা হ্যালুসিনেশনও হতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা এর প্রধান কারণ হিসেবে বলেছেন, “দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে স্বপ্নে কোনো স্থান থেকে পড়ে যাওয়ার অনুভূতি এবং এর কারনে মস্তিষ্কের রেসপন্স এর সমন্বয়ে পুরো ঘটনাটি ঘটে”। তবে এছাড়াও নানা শারীরিক সমস্যা ও পুষ্টির অভাবেও হিপনিক জার্ক হতে পারে।
কিভাবে ঘটেঃ
মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের পেশীকে অস্বাভাবিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
শরীর ঘুমিয়ে যাবার পরেও মস্তিষ্ক তার কার্যক্রম চালিয়ে যায়। ঘুমন্ত শরীর কিছুটা আরামদায়ক প্যারালাইজড বা স্থির অবস্থায় থাকলেও মস্তিষ্ক মনোজগতে দুই ধরনের ক্রিয়াকলাপের মধ্যে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে,
১) র্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM)
২) নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট (NREM)


হিপনিক জার্কের জন্য দায়ীঃ
১. অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইন বা চা-কফি গ্রহণ।
২. অতিরিক্ত মাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম।
৩. রাতজাগা, ঘুমে অনিয়ম, ওভার টায়ার্ডনেস।
৪. ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতায় ভুগলে।
৫. রাত জেগে টিভি, মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা।
৬. শরীরে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের অভাবেও স্বতঃস্ফূর্ত হিপনিক জার্ক হতে পারে।
৭. ঘুমের মাঝে বাইরের আলো বা উচ্চ শব্দের কারনেও হঠাৎ ঝাঁকুনি অনুভূত হতে পারে।
৮. অনেক্ষণ একপাশে ভর দিয়ে ঘুমালে হাত বা পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে যেতে পারে, একারণেও হিপনিক জার্ক হতে পারে।
৯. মদ্যপান করে ঘুমাতে গেলেও অনেক সময় হিপনিক জার্ক অনুভূত হয়।
১০. অনেক সময় ঘুমের ঘোরে নাক ডাকা থেকেও হিপনিক জার্ক হয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ
কিছু মানুষ হিপনিক জার্ককে শারীরিক সমস্যা ভেবে ভয় পান। তবে চিকিৎসকদের মতে, ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। হিপনিক জার্ক কোনো রোগ নয়, এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। হিপনিক জার্কের কোনো নির্দিষ্ট ঔষধ নেই। কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চললে হিপনিক জার্ক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।






লিখেছেনঃ
ফাতিমা তুজ জোহরা (নিশাত)
মেরিন সাইন্স
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
পোস্টার ক্রেডিটঃ
মোহাম্মাদ ওয়াসিফ মুরসালিন সাদনান
ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
