⭕Twin Paradox‼
⁉ রাফিয়া এবং মুবীনা দুই যমজ বোন। তাদের বয়স ২৫ বছর।রাফিয়া একজন নভোচারী এবং তার স্বপ্ন রকেটে চড়ে মহাকাশ ভ্রমণ। প্রশিক্ষণ শেষে রাফিয়ার একদিন সুযোগ হয় মহাকাশ ভ্রমণের। কিন্তু শর্ত ৫ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে ফিরতে হবে। রকেটটি আলোর ৯৯% গতিবেগ নিয়ে চলতে পারে। ভ্রমণ শুরু হওয়ার পর রাফিয়া দেখে তার ঘড়ি অনুযায়ী ২.৫ বছর সময় পার হয়ে গেল এবং তাকে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে।
পৃথিবীতে ফিরে রাফিয়া তার যমজ বোন মুবীনার সাথে দেখা করে স্তম্ভিত হয়ে যায়।মুবীনা এখন একজন বয়স্ক নারী। কিন্তু রাফিয়ার কোনো পরিবর্তন হয়নি,সে আগের মতই যুবতী। কেননা পৃথিবীর সময় অনুসারে ৩৫ বছর পার হয়ে গেলেও রাফিয়ার ঘড়ি অনুসারে মাত্র ৫ বছর সময় অতিবাহিত হয়েছে।
ব্যাপারটা নাটকীয় হলেও বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এর আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে এটি সত্য। চলুন জেনে নেয়া যাক এর আদ্যোপান্ত।
প্রথম ধারণা
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মাথায় একটি বিষয় ঘুরপাক খেতে থাকে। তিনি ভাবতেন কেমন হতো যদি মানুষ আলোর বেগে চলতে পারত? তাহলে কি নিজের ভবিষ্যৎ এ গিয়ে দেখে আসা যেত নিজের অবস্থা কেমন?
আইনস্টাইন যখন বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন জানতে পারেন বিজ্ঞানী নিউটনের দেয়া একটি ধারণা। সে ধারণা মোতাবেক স্থান ও কাল সর্বদা পরম। অর্থাৎ মহাবিশ্বের যেকোনো জায়গাতে স্থান ও কালের পরিমাপ হবে অভিন্ন। কিন্তু আইনস্টাইন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সহমত প্রকাশ করতে পারলেন না।
তিনি সময় নিয়ে আরো চিন্তা ভাবনা করতে লাগলেন। তিনি ভাবলেন যদি দুইটি ঘড়ি একই স্থানে একই সময় দিয়ে থাকে তাহলে এদের একটি ঘড়িকে অন্য গ্রহে নিয়ে গেলে সে কি আগের মত সমান সময় দিবে? গ্যালিলিওন ট্রান্সফরমেশন অনুযায়ী একই সময় দিবে কিন্তু যদি আলোর বেগে যাওয়া হয় তবে এ ধারণা অকেজো। সেক্ষেত্রে লরেঞ্জ মতবাদ কাজ করে থাকে। কোনো গতিই পরম নয় তা আমাদের সকলের জানা। পৃথিবীর ক্ষেত্রে আমরা এটি তেমন উপলব্ধি করতে পারি না কেননা আমরা বস্তুর সাপেক্ষে পৃথিবীকে স্থির ধরে থাকি। কিন্তু পৃথিবীর বাহিরে গতি হিসাবের ক্ষেত্রে একটি প্রসঙ্গ কাঠামো রাখতে হয় এবং সে গতিই হবে আপেক্ষিক গতি।
এ থেকেই জন্ম নিল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং এ তত্ত্ব মোতাবেক অতি দ্রুত গতিতে চলন্ত বস্তুর ঘড়ি কম সময় দিবে। এ থেকেই তোরী হয় ধারণা; মহাকাশে ভ্রমণ করা মানুষের বয়স পৃথিবীতে তার সমবয়সী মানুষের বয়সের চেয়ে কম হবে।
✅ব্যাখ্যাঃ
টুইন বা যমজদের নিয়ে এই ঘটনা বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় এটি একটি প্যারাডক্স বা কূটাভাস। টুইন প্যারাডক্স নিয়ে আগ্রহ এবং কৌতুহলের শেষ নেই।এ নিয়ে কতশত সিনেমা,ধারণা,মতবাদ রয়েছে।বাস্তবে এর তেমন নজির না থাকলেও গাণিতিক ভাবে এ ঘটনার ব্যাখ্যা রয়েছে।

এর সূত্র হলোঃ
t = t0/(1-v2/c2)1/2
যেখানে,
t=পৃথিবীতে থাকা পর্যবেক্ষকের ঘড়ির সময়
t0=গতিশীল বা রকেটে থাকা পর্যবেক্ষকের ঘড়ির সময়
v=চলমান বস্তুর গতি
c=শূন্যে আলোর গতি

গাণিতিক প্রমাণ
যেহেতু রকেটটি প্রায় আলোর বেগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে তাই চলমান বস্তুর গতি প্রায়.৯৯c অর্থাৎ আলোর ৯৯% বেগ হবে। তাহলে পৃথিবীর পর্যবেক্ষক এর ঘড়ি অনুসারে সময় হবে
t = 5/{1-(.99c)2/c2}1/2
t=35 year

রাফিয়া o বিন্দু হতে যাত্রা শুরু করার ২.৫ বছর পর A বিন্দুতে রকেট ঘুরিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। পৃথিবীতে অবস্থানরত মুবীনা সময় অক্ষ বরাবর চলে। X1AX2 ত্রিভুজটিতে সময়ের পরিবর্তন রাফিয়ার জন্য একটি বিন্দুর সমান হলেও পৃথিবীতে অবস্থানরত মুবীনার জন্য এরই মাঝে ৩০ বছর সময় পার হয়ে গেছে। AB বিন্দুতে রাফিয়া আবার ২.৫ বছর পর পৃথিবীতে ফিরে আসে। এক্ষেত্রে রাফিয়ার ভ্রমণের ক্ষেত্রে মোট ৫ বছর লাগলেও মুবীনার ক্ষেত্রে তা হয় ৩৫ বছর কেননা রকেটের উচ্চগতি ত্বরণ-মন্দন এসকল কিছু হিসাব করে দেখা যায় পৃথিবীর তুলনায় কম সময় অতিবাহিত হয়।
তাহলে টাইম ডায়ালেশন ব্যাবহার করে কি ভবিষ্যৎ দেখে আসা সম্ভব? বাস্তবে কোনো বস্তুই আলোর বেগে চলতে পারে না। আলোর গতিতে চলমান বস্তুর ভর হবে অসীম এবং দৈর্ঘ্য হবে শূন্য তাই তাত্ত্বিকভাবে টাইম ডায়ালেশন সম্ভব হলেও বাস্তবে তা অসম্ভব।

তথ্যসূত্র:
Written by:
Jannatul Mawa Mukti
Department of Genetic Engineering and Biotechnology
University of Chittagong
Poster Credit:
Umme Sadia
Department of Genetic Engineering and Biotechnology
University of Chittagong

Tag:cuss, Paradox, science, Theoryofrelativity, Twinparadox