April , 2023 পালিত হচ্ছে Global Astronomy Month হিসেবে এরই প্রেক্ষিতে আজকে আমাদের দ্বিতীয় বিষয় হলো একটি তারার মহাবিস্ফোরণ, সুপারনোভা
#Global_Astronomy_Month
April , 2023 পালিত হচ্ছে Global Astronomy Month হিসেবে
✨এই উপলক্ষে পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে আমরা কিছু মজার মজার মহাকাশবিজ্ঞানের বিষিয়াবস্তু সম্পর্কে ধারণা নিবো। এরই প্রেক্ষিতে আজকে আমাদের দ্বিতীয় বিষয় হলো একটি তারার মহাবিস্ফোরণ, সুপারনোভা ।
✨ কখনো ভেবে দেখেছেন কি আমাদের বায়ুমন্ডলের কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন কিংবা খনিজ লোহা, স্বর্ণ এগুলোর আদি উৎস কি? কিভাবে এগুলো প্রথম পৃথিবীতে এসেছিলো? আমাদের আজকের আলোচনা সেই প্রসঙ্গেই। বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের পৃথিবীর বেশিরভাগ কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সিলিকন, লোহা এবং স্বর্ণ এগুলো এসেছে মূলত সুপারনোভা বা অতিনবতারার মাধ্যেমে! কি অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন এই সুপারনোভা বা অতিনবতারা আবার কি জিনিস? তাহলে চলুন জেনে নেই এই সুপারনোভা বা অতিনবতারা সম্পর্কে।
সহজ ভাষায় মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী বিস্ফোরণটি সুপারনোভা নামে পরিচিত। একটি নক্ষত্র যখন তার জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছায় তখন তার মধ্যে একটি বিস্ফোরণ ঘটে, যার মাধ্যেমে তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই বিস্ফোরণটিই সুপারনোভা বা অতিনবতারা নামে পরিচিত। সুপারনোভা শব্দটি ল্যাটিন শব্দ, যেখানে “সুপার” অর্থ “উপরে”, এবং “নোভা” অর্থ “নতুন”। সুপারনোভা শব্দটি ১৯২৬ সালে প্রথম ব্যবহৃত হয়। আর সুপারনোভার বাংলা হচ্ছে অতিনবতারা, যা নবতারার সাথে অতি উপসর্গ যোগে গঠিত। এই বিস্ফোরণকে এই নাম দেওয়া হয়েছিল কারণ মনে করা হতো এর মাধ্যমে নতুন নক্ষত্রের জন্ম হয়। কিন্তু বর্তমানে আমরা জানি যে সুপারনোভা আসলে পুরানো নক্ষত্রদের মৃত্যুকালীন বিস্ফোরণ। যখন সুপারনোভা ঘটে, তখন নক্ষত্রটি বিকিরণ এবং কণা আকারে প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত করে এবং সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রটি সাময়িকভাবে পুরো ছায়াপথের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, পাশাপাশি এই বিস্ফোরণের মাধ্যেমে সোনা ও প্লাটিনামের মত ভারী উপাদান ও উৎপন্ন হয়। সুপারনোভা যেহেতু নক্ষত্রের মৃত্যুর সাথে জড়িত, তাই সুপারনোভা জানতে বা বুঝতে হলে নক্ষত্রের মৃত্যু কিভাবে ঘটে সে সম্পর্কে জানতে হবে। তার আগে চলুন জেনে নেই একটি নক্ষত্র কিভাবে বেঁচে থাকে!
নক্ষত্ররা সাধারণত বেঁচে থাকে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যেমে। এই নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া টা কি? সহজ ভাষায় বলতে গেলে যে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় ছোট ছোট নিউক্লিয়াস সমূহ একত্র হয়ে বড় নিউক্লিয়াস গঠন করে তাকে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রয়া বলে। যেমন হাইড্রোজেন পরমাণুর দুটি নিউক্লিয়াস পরস্পরের সাথে একত্রিত হয়ে গঠন করে একটি হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস। এই নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় জন্য প্রয়োজন হয় উচ্চ তাপমাত্রার, যা নক্ষত্রদের কেন্দ্রে খুব সহসাই পাওয়া যায় ( বিস্ফোরণের পূর্বে প্রায় ১০০ বিলিয়ন কেলভিন তাপমাত্রা বিরাজ করে)। নক্ষত্রের কেন্দ্রের মধ্যে এত পরিমাণ তাপমাত্রা এবং চাপের ফলে হাইড্রোজেনের ইলেকট্রন গুলো পরমাণুর কক্ষপথ থেকে ছিটকে বের হয়ে যায় এবং নিউক্লিয়াসগুলো একা একা ঘুরে বেড়ায়। শুধু তাই নয় এই অত্যাধিক তাপমাত্রার ফলে নিউক্লিয়াসগুলো একে অপরের সাথে সজোরে ধাক্কা খেয়ে জুড়ে যায়, আর এভাবেই নক্ষত্রের মধ্যে নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটে। আর এই ফিউশন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তির সাহায্যেই একটি নক্ষত্র বেঁচে থাকে।
এবার চলুন সুপারনোভা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক……
সুপারনোভা প্রধানত দুই ধরণের: টাইপ 1 সুপারনোভা এবং টাইপ 2 সুপারনোভা। প্রত্যেক ধরণের সুপারনোভা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে ঘটে থাকে।
1️⃣ টাইপ-১ সুপারনোভাঃ
এই সুপারনোভা সেসব নক্ষত্রে ঘটে যাদের ভর সূর্যের ভরের কমপক্ষে পাঁচগুণ। বিশাল এই নক্ষত্রগুলি তাদের কেন্দ্রগুলিতে প্রচুর পরিমাণে পারমাণবিক জ্বালানী পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করে এবং এই উৎপন্ন শক্তি নক্ষত্রের কেন্দ্রকে অত্যাধিক উত্তপ্ত করে রাখে। এই অত্যাধিক তাপ নক্ষত্রের কেন্দ্রে চাপ তৈরি করে এবং এই চাপ নক্ষত্রটিকে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে।
একটি নক্ষত্র দুটি বিপরীত শক্তির (কেন্দ্রমুখী মধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং বর্হিমুখী চাপ) মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বেঁচে থাকে। নক্ষত্রের মাধ্যাকর্ষণ বল নক্ষত্রটিকে ছোট এবং অত্যাধিক বলের মধ্যে চেপে ধরে রাখার চেষ্টা করে। আবার নক্ষত্রের কেন্দ্রে জ্বলন্ত পারমাণবিক জ্বালানি শক্তিশালী বাহ্যিক চাপ তৈরি করে। এই বাহ্যিক চাপ মধ্যাকর্ষণের অভ্যন্তরীণ চাপকে প্রতিরোধ করে।
কিন্তু এক পর্যায়ে এই বিশাল নক্ষত্রের জ্বালানি শেষ হয়ে যায়, ফলে নক্ষত্রটি শীতল হয়ে যায়। এর ফলে বাহ্যিক চাপ কমে যায়, মধ্যাকর্ষণ জয় লাভ করে এবং নক্ষত্রটি হঠাৎ ভেঙে পড়ে। কল্পনা করুন ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে পৃথিবীর ভরের এক মিলিয়ন গুণ ধসে পড়বে! এত দ্রুত পতনের ফলে একটি বিশাল শক ওয়েভ তৈরি হয় যা নক্ষত্রের বাইরের অংশটিকে বিস্ফোরিত করে! এই বিস্ফোরণটিই টাইপ 1 সুপারনোভা নামে পরিচিত।
2️⃣ টাইপ-২ সুপারনোভাঃ
দ্বিতীয় ধরনের সুপারনোভা এমন এক সিস্টেমে ঘটে যেখানে দুটি নক্ষত্র একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে এবং সেই নক্ষত্রগুলির মধ্যে কমপক্ষে একটি নক্ষত্র পৃথিবীর আকারের সাদা বামন হয়ে থাকে। সাদা বামন হল এক ধরনের নাক্ষত্রিক অবশিষ্টাংশ যা তৈরি হয় যখন সূর্যের থেকে প্রায় ৮ গুণ কম ভরের একটি নক্ষত্রের পারমাণবিক জ্বালানী শেষ হয়ে যায় এবং এর বহিস্তর প্লেনেটারি নেবুলাতে পরিণত হয়, এটি খুবই উচ্চ ঘনত্ব বিশিষ্ট, যার ভর সূর্যের সাথে এবং আকার পৃথিবীর সাথে তুলনা করা হয় । যদি একটি সাদা বামন অন্যটির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বা তার নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে খুব বেশি পরিমাণ পদার্থ টেনে নেয় তবে সাদা বামনটি বিস্ফোরিত হতে পারে। আর এই বিস্ফোরণটি টাইপ 2 সুপারনোভা নামে পরিচিত।
মিল্কিওয়েতে গড়ে প্রতি ৫০ বছরে একবার সুপারনোভা দেখা যায়। খালি চোখে দৃশ্যমান সবচেয়ে সাম্প্রতিক সুপারনোভা ছিল “সুপারনোভা 1987 A”, 1987 সালে। এটি প্রায় 168,000 আলোকবর্ষ দূরে ছিল।
যখন একটি সুপারনোভা ঘটে, তখন এর শক্তিশালী বিকিরণ মহাকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে যা ৫০ আলোকবর্ষের মধ্যে যে কোনও কিছুর ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম। যেখানে আমাদের সৌরজগতের প্রস্থ মাত্র দুই আলোকবর্ষ। অর্থাৎ সুপারনোভার বিস্ফোরণের প্রভাব আমাদের সৌরজগতের পরপর ২৫টির দূরত্ব সমান জায়গা জুড়ে হবে। চিন্তা করুন কতটা বিশাল আয়তন জুড়ে প্রভাব বিস্তার করে এই সুপারনোভা ।
হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জ্যেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্ক রিড বলেছেন:
…যদি আমাদের পৃথিবীর ৩০ আলোকবর্ষের মধ্যে একটি সুপারনোভা বিস্ফোরিত হয়, তাহলে এটি পৃথিবীতে বড় প্রভাব ফেলবে, সম্ভবত গণ বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাবে। তাছাড়া এই সুপারনোভা থেকে নির্গত এক্স-রে এবং আরও শক্তিশালী গামা রশ্মি ওজোন স্তরকে ধ্বংস করতে পারে যা অতিবেগুনী রশ্মি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। এটি বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেনকেও আয়নিত করতে পারে, যার ফলে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়াশাজাতীয় নাইট্রাস অক্সাইড তৈরি হবে। সুপারনোভা থেকে বাঁচতে হলে পৃথিবীকে বিস্ফোরিত নক্ষত্র থেকে অন্তত ৫০ আলোকবর্ষ দূরে থাকতে হবে। সৌভাগ্যবশত, বর্তমানে পৃথিবীর ৫০ আলোকবর্ষের মধ্যে এমন কোনো নক্ষত্র নেই যে সুপারনোভা ঘটানোর জন্য প্রস্তুত।
এই সুপারনোভা মহাবিশ্বের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং করছে। তারা গ্রহ, নক্ষত্র এবং অনেক ভারী উপাদান তৈরিতে ভূমিকা পালন করে।
সর্বোপরি, সুপারনোভা হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী ইভেন্টগুলির মধ্যে একটি যা বিশ্বজুড়ে জ্যোতির্বিদ এবং জ্যোতিঃপদার্থবিদদের মুগ্ধ করে চলেছে।
References :
1.://spaceplace.nasa.gov/supernova/en/
2.https://youtu.be/q4DF3j4saCE
3.https://youtu.be/YIKXvDlf8_0
4.https://youtu.be/Uyh4JP1ELpY
5.https://earthsky.org/astronomy-essentials/safe-distance-from-a-supernova-earth/
Content Credit :
✏️Written by:
ASIF AL NAEEM
General Member, CUSS
Department of Physics
Session: 2020-21
Poster Credit :
Sanjana Tabassum Nova
General Member, CUSS
Department Of Physics
Session : 2019-20