Birthday of Marie Curie
প্রচলিত প্রথা ভেঙে নিজেকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনেক নারী। তবে এর জন্য যাদের অতিক্রম করতে হয়েছে অনেক অমসৃণ পথ ইতিহাসে তারাই অমর হয়ে আছেন। তেমনই একজন নারী মেরি কুরি।
ফরাসি বিজ্ঞানি মেরি কুরি, পুরো নাম মেরি স্কলোডসকা কুরি। ডাক নাম মানিয়া। তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য পুরো পৃথিবী তাঁকে মনে রাখবে সব সময়। তিনিই দু’ বার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র নারী যিনি দুইবার দুইটি বিষয়ে (পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন) নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
বিশ্বের নারী বিজ্ঞানীদের পথিকৃৎ মাদাম মেরি কুরি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬৯ সালের ৭ নভেম্বর। “কী করা হয়েছে সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে এখনও যা করা হয়নি, বাকি আছে, সেটা নিয়েই ভাবতে হবে!” এমন ই নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আর দশটা নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ‘Male Only’ তকমা দেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই শহরের সবচেয়ে মেধাবী তরুণী সেকেন্ডারি স্কুলের সেরা ছাত্রী মারিয়া স্ক্লোডোস্কার পক্ষে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক ও গোপন পদ্ধতিতে। শেষ পর্যন্ত নাছোড়বান্দা মারিয়া ছোট বোন ব্রন্যার সাথে একটা চুক্তিতে এসেছিলেন। দুবোনই বিদেশে গিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ করবেন। প্রথম পাঁচ বছর মারিয়া কাজ করবেন, ব্রন্যাকে পড়ার সুযোগ করে দেবেন, পরের পাঁচ বছর তা সুদে-আসলে ফিরিয়ে দেবে ব্রন্যা। চুক্তি অনুযায়ী মারিয়া ৫ বছর অন্যের বাড়িতে গভর্নেস আর টিউটর হিসেবে কাজ করে গেলেন। অবসর সময়ে পড়তে লাগলেন পদার্থবিদ্যা, রাসয়ন আর গণিতের বই!
এই পড়াশোনা কাজে দিল। ১৮৯১ সালে মেরি ভর্তি হলেন প্যারিসের সোবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজেকে তিনি পুরোপুরি সঁপে দিল পদার্থবিদ্যার মোহময় জগতে। তখনো পর্যন্ত পদার্থবিদ্যা বা গণিত কেবল পুরুষদের বিষয়—এমন একটা ধারণা পশ্চিমেও প্রচলিত। সেই অচলায়তন তিনি ভাঙলেন। পকেটে টাকাপয়সা নেই, খাবার বলতে কেবল পাউরুটি আর চা। এ সময়ের অপুষ্টি পরবর্তী জীবনে তাকে ভুগিয়েছিল অনেক। কিন্তু স্বপ্ন, আবেগ আর জেদের কমতি ছিল না। ১৮৯৩ সালে পদার্থবিদ্যায় এবং পরের বছর গণিতে দুইবার মাস্টার্স সম্পন্ন করলেন মেরি। বিশ্ব তখনো জানতে না এই মেয়েটি প্রথম নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার জিতবেন একদিন, হবেন নারী পুরুষের মধ্যে প্রথম দুবার নোবেলজয়ী ব্যক্তি। ওয়ারশতে সুযোগ না পাওয়া সেই মেয়েটির নামই মেরি কুরি, পরবর্তীতে মাদাম কুরি হিসেবেই যিনি পরিচিত হন সারা বিশ্বে।
সোরবন থেকে ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন ১৯০৬ সালে। তারপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেল ফিজিকসের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন মেরি কুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই বিষয়ে তিনিই প্রথম নারী অধ্যাপক। ততদিনে পদার্থবিজ্ঞানের আরেক দিকপাল পিয়েরে কুরির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি। এই দম্পতি খেয়ে না খেয়ে, কাজ করে যান কুরি ল্যাবরেটরিতে। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে অবস্থিত এই গবেষণাগারের পরিচালক হন তিনি ১৯১৪ সালে।
♠️১৮৯৬ সালে হেনরি বেকরেল রেডিওঅ্যাকটিভিটি বা তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেছেন। এই আবিষ্কার প্রেরণা যুগিয়েছিল কুরি দম্পতিকে। ১৮৯৮ সালে মেরি আবিষ্কার করেন ‘থোরিয়াম’ মৌলটি তেজস্ক্রিয়। মেরির গবেষণায় মুগ্ধ হয়ে স্বামী পিয়েরেও স্ফটিকের ওপর তার নিজস্ব গবেষণা বাদ দিয়ে মেরির গবেষণায় যোগ দেন। ১৮৯৮ সালের জুলাই মাসে কুরি দম্পতি একটা পেপার পাবলিশ করে জানান, তারা ‘পিচব্লেন্ড’ থেকে নতুন একটা তেজস্ক্রিয় মৌলের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এর নাম তারা দিলেন ‘পোলোনিয়াম’। নামটা এসেছে মেরির জন্মস্থান পোল্যান্ড থেকে। একই সালের ডিসেম্বর মাসে তারা ঘোষণা দেন দ্বিতীয় তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কারের কথা! এবার মৌলটির নাম দেওয়া হয় রেডিয়াম। ১৮৯৮ থেকে ১৯০২ পর্যন্ত মেরি আর পিয়েয়ে তেজস্ক্রিয়তার ওপর মোট ৩২টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত করেন।
⭕ ১৯০৬ সালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পিয়েরে কুরির অকালমৃত্যু হয়। কিন্তু মাদাম কুরি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। নিজের জীবন তিনি উৎসর্গ করেছিলেন মানব জাতির কল্যাণে, রেডিয়ামের ব্যবহারবিধি জানতে, এক্স-রে আবিষ্কারসহ আরও নানা কিছুতে। পরে কন্যা আইরিনও যোগ দেয় তাঁর সঙ্গে। ১৯০৩ সালে স্বামী পিয়েরের জীবদ্দশায় এই দম্পতি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সে বছর তাদেঁর সঙ্গে নোবেল ভাগাভাগি করেছিলেন হেনরি বেকরেল। ১৯১১ সালে মেরি কুরি আবারও নোবেল পুরস্কার পান রসায়নে।
⏹️গবেষণা ছাড়াও মেরি কুরি দ্বিতীয় যুদ্ধে আহত সৈনিকদের দিয়েছেন একাগ্র সেবা, ভবিষ্যত বিজ্ঞানীদের দিয়েছেন উপদেশ ও পরামর্শ। সর্বোপরি নিজের স্বাস্থ্যের দিকে না তাকিয়ে যিনি ঢেলে দিয়েছেন তাঁর সবটুকু সময়। মেরি কুরি তাঁর বাকি জীবন রেডিয়াম গবেষণাগারে কাটিয়ে দিয়েছেন। রেডিয়ামের বিষ তাঁকে সমস্ত জীবন ধরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই মহীয়সী বিজ্ঞানীর সাধিকার জীবনপ্রদীপ চিরদিনের জন্য নির্বাপিত হয়।
References:
1.http://surl.li/mxjyt
2.https://www.bengaliportal.com/marie-curie-biography-in-bengali/
3.http://surl.li/mxjza
4.http://www.kholakagojbd.com/others/37772
Content Credit :
✏️ Written By :
Nayeema Tabassum Teesha
General Member,CUSS
Team : Phoenix
Institute of Forestry and Environmental Sciences
Session : 2019-20
Poster Credit :
Abidul Moula Khan
IT Executive,CUSS
Department Of Physics
Session : 2019-20