International Sloth Day
“আন্তর্জাতিক স্লথ দিবস”
2️⃣0️⃣প্রতিবছর অক্টোবরের ২০ তারিখ বিশ্বব্যাপী প্রানীপ্রেমি ও সাধারন মানুষেরা মিলে “আন্তর্জাতিক স্লথ দিবস” পালন করে থাকেন। এই বিশেষ দিবসটি পালন করা হয় এই অনন্য ও আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী প্রানীটার(স্লথ) জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে। এই দিনটি আমাদের এক অত্যাশ্চর্য প্রানী সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি পৃথিবীর বিশাল জীববৈচিত্র্য সম্পর্কেও আমাদের উপলব্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।
স্লথ, যাদের নামের অর্থই হচ্ছে আলস্য। স্লথ হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে ধীরতম স্তন্যপায়ী। স্লথ তাদের ধীরগতির চালচলন এবং নিরুদ্বেগ হাবভাব এর জন্য পরিচিত। এই বিশেষ স্তন্যপায়ী প্রানীটি মূলত সেন্ট্রাল এবং সাউথ আমেরিকার রেইনফরেস্টে দেখা যায়।
প্রকৃতিতে দুই ধরনের স্লথ দেখা যায়। একটি হচ্ছে দুই আঙুলের স্লথ (Two Toed Sloth), অন্যটি তিন আঙুলের স্লথ (Three Toed Sloth)। তবে, এদের পায়ের আঙ্গুলের দিকে তাকালে খুব একটা পার্থক্য করা যায় না, কারণ উভয়েরই পায়েই আছে তিনটি করে আঙ্গুল, তবে এদের হাতের আঙুলে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। জীবনের প্রায় ৯০ শতাংশ সময় এরা গাছের ডালে উল্টো হয়ে ঝুলে থেকে কাটিয়ে দেয়, আর এভাবে তারা চলতে পারে মিনিটে সর্বোচ্চ প্রায় ৪.৫ ফুট পর্যন্ত। এরা এদের মাথা ২৭০ ডিগ্রী পর্যন্ত ঘুরাতে সক্ষম।
স্লথের রয়েছে বিশেষ ধরণের হাত ও দীর্ঘ পা এবং বাঁকানো নখর, যা তাদের সহজে গাছের ডালে উল্টো ঝুলে থাকতে সাহায্য করে, কিন্তু একই সাথে, মাটিতে তারা হাঁটতে পারে না, যখন তারা মাটিতে থাকে অনেকটা হামাগুড়ি দিয়ে তারা নিজেদের টেনে নিয়ে চলে। তবে তারা খুব কমই মাটিতে নেমে আসে, আর এসময় তাদের গতি মিনিটে ১ ফুটের বেশি হয় না।
উল্টোদিকে, সাঁতারের ক্ষেত্রে এরা বেশ দক্ষ। সাঁতারের ক্ষেত্রে তারা শ্বাস ধরে রাখতে পারে প্রায় ৪০ মিনিট পর্যন্ত, যেটা আশ্চর্যজনক। সাঁতারে তাদের গতি মিনিটে ১৩.৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, যা গাছের ডালে কিংবা মাটিতে চলাচল থেকে অনেক বেশি।
তাদের শান্ত ধীর গতির পাশাপাশি তাদের শরীরেও খুবই ধীর বিপাকিয় প্রক্রিয়া চলে, যা তাদের অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের থেকে আরো আলাদা করে। দিনে ১৫ ঘন্টা তারা স্থির থেকে কাটিয়ে দেয় এবং ঘুমিয়ে কাটায় ৮-৯ ঘন্টা।
পাতা এবং ফলের মতো স্বল্প-শক্তির খাদ্য যা তারা গ্রহণ করে। সেসব একটি ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে বিপাক হয়, যা তাদের শক্তি সংরক্ষণ করে রাখতে কাজে দেয়। তাই এরা অনেক দিন পর্যন্ত না খেয়ে এবং খুব ই কম পরিমান খাবার গ্রহন করে থাকতে পারে। এই ধীর বিপাক তাদের শরীরের নিম্ন তাপমাত্রার জন্যও দায়ী, যা তাদের নিরবিচ্ছিন্ন আচরণেও অবদান রাখে। সারাদিনে তারা গড়ে ৪১ গজের বেশি নড়াচড়া করে না, যেটা একটা ফুটবল মাঠের অর্ধেকেরও কম।
স্লথ বনের বাস্তুতন্ত্রে ব্যপক ভূমিকা রাখে। তৃণভোজী প্রানী হিসেবে বিভিন্ন বৃক্ষের বীজ ফল ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাছপালার পরাগায়ন ও প্রজননে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এরা বিশেষ তাৎপর্যপূন্য। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এরা অবদান রাখে।
এদের অতি ধীর হাবভাবের দরুন এদের গায়ে শৈবাল জন্ম নিতে পারে। যদিও শৈবালের সাথে এদের মিথোজীবী সম্পর্ক আছে। স্লথের পশম আদ্র হওয়ায় শৈবাল এখানে পানি ও আবাস লাভ করে। অন্যদিকে, শৈবালের সবুজ বর্ণ স্লথকে প্রকাৃতিক ছদ্মবেশ দেয়। ফলে, তারা শিকারীদের চোখ এড়াতে পারে। নিশাচর বিড়াল শ্রেণির শিকারী প্রাণী বা হার্পি ঈগলের হাত থেকে লুকাতে বেশ কাজে দেয় এই হালকা সবুজ শ্যাওলার স্তর।
পৃথিবীজুড়ে ক্রমাগত বন উজারের কারণে অন্যান্য প্রাণীদের মতো স্লথ ও বিপর্যস্ত। যেহেতু এদের গতি কম, তাই অন্য প্রাণীদের থেকে এদের বিপদটাও বেশি। বন উজারের কারণে নিজের বাসস্থান পরিবর্তনের জন্য দূরের পথ পাড়ি দিতে হয় এদের। এই দীর্ঘ পথের যাত্রার জন্য তাদের শরীর যেমন উপযুক্ত না, তেমনি পথে বিড়াল জাতীয় শিকারি প্রাণীদের হাতেও থাকে অরক্ষিত।
⚠️ এজন্য পৃথিবীতে দিনদিন কমে আসছে স্লথের সংখ্যা। বিশেষ প্রজাতির তিন আঙুল বিশিষ্ট পিগমি স্লথকে ‘গুরুতরভাবে বিপন্ন’ ঘোষণা করা হয়েছে। এর অর্থ, একে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তেমন কিছু করার সুযোগ নেই।
অধিকন্তু, অবৈধ পোষা প্রানীর বাণিজ্যও স্লথের অস্তিত্বে উল্লেখযোগ্য হুমকির সৃষ্টি করে, অনেক স্লথ বন থেকে অবৈধভাবে ধরা হয় এবং বহিরাগত পোষা প্রাণী হিসাবে বিক্রি করা হয়। সড়ক দুর্ঘটনাও এক্ষেত্রে একটা উদ্বেগজনক কারণ। স্লথরা কখনও কখনও মাটিতে নেমে আসে, যা তাদের যানবাহনের নিচে চাপা পড়ার হুমকিতে রাখে।
বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক স্লথ দিবস পালন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে। চিড়িয়াখানা, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং স্কুলে শিক্ষামূলক ইভেন্টগুলি মানুষকে স্লথের জৈবনিক প্রকিয়া, আচরণ এবং সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারাভিযান, তথ্যচিত্র এবং নিবন্ধগুলিও এই চিত্তাকর্ষক প্রাণীদের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এইভাবে প্রতিবছর “আন্তর্জাতিক স্লথ দিবস” আমাদেরকে এই প্রানী সম্পর্কে আরো একটু জানার সুযোগ করে দেয়। বর্তমানে এদের এই বিলুপ্তপ্রায় অবস্থানের পেছনে দায়ী কারনগুলো প্রচারের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রাকৃতিক সংরক্ষণ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে বার্তা প্রেরন করা হয়। সর্বপরি আমার পৃথিবীর এক অদ্ভুত জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে শিশু,যুবক,বৃদ্ধ সকল প্রজন্মকে উপলব্ধি করতে শেখানো হয় এই দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে।
References:
1. https://www.britannica.com/animal/sloth
2.https://www.bigganchinta.com/biology/typx158esg
3. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sloth
4. https://neonbati.com/facts/animals/sloth/
5. https://www.worldwildlife.org/species/sloth
???? Content Credit :
✏️ Written By :
Alif Shahriar
General Member
Team : Up to Atom
Department Of Geography and Environmental Studies
Session : 2021-22
Poster Credit :
Md. Ahanaf Ibna Yakub Sajim
Department Representative
Department Of Physics
Session : 2019-20