International women and girls in science day
নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে নারী ও পুরুষের হাত ধরেই পৃথিবী সভ্যতার পথে এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে চলেছে বিজ্ঞানের পথে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরও রয়েছে সমান অবদান। ২০ হাজার বছর আগে নারীদের হাতেই সূচনা হয় কৃষিকাজের। নারীই প্রথম কৃষিবিদ, চিকিৎসক আর প্রকৌশলী। বিজ্ঞানের এই অগ্রযাত্রায় যেসকল নারী অবদান রেখেছেন তাদের কয়েকজনের কথা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-

নারী গণিতবিদ অগাস্টা অ্যাডা লাভলেস কম্পিউটার প্রোগ্রামের প্রথম ধারণা দেন। তিনি বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি লর্ড বায়রন এবং আনা ইসাবেলা বায়রনের কন্যা। তিনি বিখ্যাত গণিতবিদ ও যুক্তিবিদ ডি-মরগ্যানের ছাত্রী ছিলেন। ১৮৪১ সালের দিকে চার্লস ব্যাবেজ ডিফারেন্স ইঞ্জিনের চেয়ে অধিকতর আধুনিক এবং জটিল কম্পিউটার ‘অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন’ এর ধারণা উপস্থাপন করেন। এই ইঞ্জিনের গাণিতিক হিসাবগুলো কোন পদ্ধতিতে করবে তা নিয়ে ব্যাবেজ সমস্যার সম্মুখীন হন। অ্যাডা এ ক্ষেত্রে ব্যাবেজকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন। তিনি অসংখ্য বীজগাণিতিক উপায় যোগ করেন। অন্যদিকে ‘বার্নোলি সংখ্যা’ নামক একটি জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হন ব্যাবেজ। অ্যাডা এই সমস্যার সমাধান করেন। তিনি পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার অ্যালগরিদম রচনা করেন। সেজন্যই তাকে পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার বলা হয়। আজকের যুগের আধুনিক কম্পিউটারের ধারণা প্রবর্তনে ব্যাবেজের পাশাপাশি অ্যাডার ভূমিকাও অপরিসীম।

নোবেল পুরষ্কার জয়ী প্রথম নারী বিজ্ঞানী হলেন মাদাম মেরি ক্যুরি। তিনি ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তার উপর গবেষণার জন্য তার স্বামী পিয়ের ক্যুরি এবং তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক অঁরি বেকেরেলের সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। পিচব্লেন্ড থেকে রেডিয়াম পৃথক করার জন্য তিনি এককভাবে ১৯১১ সালে রসায়নেও নোবেল পুরস্কার জেতেন। তিনি বিজ্ঞানের দুইটি ভিন্ন শাখায় দুইবার নোবেল পুরস্কার জয়ী প্রথম নারী। শুধু তাই নয়, তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী অধ্যাপকও ছিলেন।

ইরেন জোলিও কুরি ছিলেন বিজ্ঞানী ম্যারি কিউরীর মেয়ে। তিনি ও তার স্বামী ফ্রেদেরিক জোলিও ক্যুরি সর্ব প্রথম আর্টিফিসিয়াল রেডিওঅ্যাক্টিভিটি বা কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। এজন্য তারা যৌথভাবে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।

বিজ্ঞানে অবদানের জন্য অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি (১৮২৮) কর্তৃক গোল্ড মেডেলে ভূষিত হওয়া প্রথম নারী জ্যোতিবিজ্ঞানী হলেন ক্যারোলিন হার্শেল। তিনি 35P/Herschel-Rigollet ধূমকেতু আবিষ্কার করেন। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন সময়ে ক্যারোলিন জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নীহারিকার তখনো ধারাক্রমে ম্যাপ করা হয়নি। তাই ক্যারোলিন নীহারিকার ম্যাপ করার কাজে লেগে পরেন। রাতে তার ভাই উইলিয়াম দূরবীনের মাধ্যমে আকাশ দেখতেন এবং ক্যারোলিন পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখতেন। ক্যারোলিন এবং তার ভাই প্রায় ২৫০০টি নক্ষত্র এবং নীহারিকার ম্যাপিং করেন।


চিয়েন-শিউং উ একজন চীনা-মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী যিনি তেজস্ক্রিয়তা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ম্যানহাটন প্রকল্পে কাজ করেন, যেখানে তিনি গ্যাসীয় ব্যাপনের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম ধাতুকে ইউ-২৩৫ এবং ইউ-২৩৮ আইসোটোপসমূহ পৃথক করতে সাহায্য করেন। তিনি ‘উ পরীক্ষণ’ পরিচালনার জন্য বিখ্যাত, যেটি পেয়ারিটির সংরক্ষণ সূত্রের সাথে সাংঘর্ষিক। এই আবিষ্কারের জন্য তার সহকর্মী সুং-দাও লি ও চেন নিং ইয়াং ১৯৫৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

ভেরা রুবিন একজন ছায়াপথসমূহের ঘূর্ণনের হারের উপরে সর্বাগ্রগামী গবেষণা করেন। তিনি ছায়াপথের ঘূর্ণন বক্ররেখাগুলো অধ্যয়ন করে ছায়াপথগুলোর পূর্বাভাসকৃত কৌণিক গতি এবং পর্যবেক্ষণকৃত গতির মধ্যকার বিচ্যুতি বের করেন। এই ঘটনাটি ছায়াপথ ঘূর্ণন সমস্যা নামে পরিচিতি লাভ করে, এবং এটি ছিল তমোবস্তু-র অস্তিত্বের একটি প্রমাণ।

জানকী আম্মল একজন বিখ্যাত ভারতীয় উদ্ভিদ বিজ্ঞানী যিনি আখ এবং বেগুন নিয়ে তাঁর গবেষণার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেন। সাইটোজেনেটিক্স এবং ফাইটোজিওগ্রাফি নিয়েও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে বোটানি ও সাইটিজেনটিক্সের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক এল এল ডি প্রদান করে।

ফ্লোসিং ওং-স্টাল একজন চীনা-আমেরিকান ভাইরোলজিস্ট এবং আণবিক জীববিজ্ঞান। তিনিই সর্বপ্রথম সফলভাবে এইচআইভি ক্লোন করেন। তিনি এইচআইভি জিনের একটি মানচিত্রও তৈরি করেন এবং এইচআইভি এইডসের কারণ বের করতে সাহায্য করেন। ১৯৯০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান দিয়েগোতে (UCSD) একটি এইডস নিয়ে গবেষণা করেন।

রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক অ্যাসিড তথা ডিএনএ-র আণবিক কাঠামো আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এছাড়া ফ্রাঙ্কলিন ভাইরাস নামক অণুজীবের গঠন সম্পর্কেও নতুন তথ্য আবিষ্কার করেন, যার বদৌলতে সাংগঠনিক ভাইরাসবিজ্ঞান নামক বিজ্ঞানের একটি নতুন উপশাখার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর বাইরে কয়লা এবং গ্রাফাইটের গঠন-কাঠামো অনুধাবনের ক্ষেত্রেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।


Content Credit :

Mohammad Shahabuddin Hridoy
Department Representative
Department of Botany
Session : 2019-2020.
Poster Credit:
Md Fiaz Ihosan
IT Executive
Department of Genetic Engineering