World Asthma Day
আজ ২রা মে, ২০২৩; মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার। বিশ্ব হাঁপানি দিবস (World Asthma Day) একটি বার্ষিক সচেতনতামূলক ইভেন্ট, যা প্রতিবছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার পালিত হয়।
বিশ্ব হাঁপানি দিবসের অভিযাত্রা:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) এর সম্মিলিত কার্যক্রম ও উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে একটি সমন্বিত সংস্থা GINA (Global Initiative for Asthma) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে এই সংস্থারই উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী হাঁপানি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও তা থেকে বাঁচার উপায় ও উন্নত যত্ন সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে জ্ঞান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার বিশ্ব হাঁপানি দিবস (WORLD ASTHMA DAY; WAD) পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিশ্ব হাঁপানি দিবস ২০২৩ এর প্রতিপাদ্য :
GINA (Global Initiative for Asthma) সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্ব হাঁপানি দিবস ২০২৩ এর প্রতিপাদ্য হলো, “সবার জন্য হাঁপানি শুশ্রূষা- Asthma Care for All”
হাঁপানি রোগ কি?
হাঁপানি একটি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ। এটি নির্বিশেষে যেকোনো বয়স, জাতি এবং লিঙ্গের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। সাধারণত দীর্ঘ সময়কালীন শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ও সংবেদনশীলতার কারণে রোগীর স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটলে, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কষ্ট অনুভূত হলে তাকে হাঁপানি বা অ্যাজমা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়াও হাঁপানি আক্রান্ত রোগীর মধ্যে আরো বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) এর মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৩৫ মিলিয়ন মানুষ হাঁপানি রোগে ভুগছেন। ধারণা করা হয়, প্রতি বছর প্রায় ২,৫০,০০০ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় হাঁপানি রোগ। কার্যকর চিকিৎসার পর্যাপ্ততা সত্ত্বেও, হাঁপানিতে আক্রান্ত অনেক রোগী এখনো তাদের লক্ষণগুলি পরিচালনা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে লড়াই করে।
☑️হাঁপানি রোগের লক্ষণ:
সাধারণত হাঁপানি রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা সহ আরো কিছু পারিপার্শ্বিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। শ্বাসনালীগুলোতে প্রদাহ এবং সংকীর্ণতা দেখা যায়, যা শ্বাস নিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে। এছাড়া আরো অনেক লক্ষণ দেখা যায়; যেমন,
– ঘন ঘন শুকনো কাশি, বুক শক্ত হয়ে যাওয়া
– শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুকে শোঁ শোঁ আওয়াজ করা
– হঠাৎ দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা অনুভব করা
– ঋতু পরিবর্তনের কারণে, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডায় অস্বস্তির সাথে শ্বাসকষ্ট হওয়া
– ধুলোবালি যুক্ত পরিবেশ এবং আবদ্ধ ঘরে শুকনো কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট হওয়া
– বিটাব্লকার এবং অ্যাসরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট অনুভব হওয়া।
☑️হাঁপানি রোগের কারণ:
সাধারণত এই রোগটি ‘এটোপি’ বা জিনগত(Genetic) বা জন্মগত হয়ে থাকে। কিছু বিশেষ ‘এলার্জি’,পরিবেশগত বা খাবারের কারণেও হতে পারে। এছাড়াও কোনো ধরনের দূষণগত কারণ, ভাইরাল ইনফেকশন, ঋতু পরিবর্তন, পশমী প্রাণীর সংস্পর্শতা, ব্যায়াম, শারীরিক বা কায়িক শ্রম, অত্যাধিক টেনশন ও মানসিক চাপ, শ্বাসনালীর অতি-সক্রিয়তা (Bronchial hyper-responsiveness), কোনো বিশেষ ধরনের ওষুধ খাওয়ার সাইড ইফেক্টের কারণেও হতে পারে।
☑️হাঁপানি রোগ থেকে পরিত্রাণের সাধারণ উপায়:
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের অনেক মানুষই সারা বছর হাঁপানি রোগে ভুগছেন। জিনগত, ঋতুপরিবর্তন, অ্যালার্জেনসহ আরো বিভিন্ন কারণে এই রোগে কষ্টে পতিত হয় অনেক মানুষ। এর থেকে পরিপূর্ণভাবে পরিত্রাণ না পাওয়া গেলেও কিছু সাধারণ উপায়ে এই রোগের কষ্ট থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এই রোগের রোগীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী হলো ইনহেলার, যা শ্বাসকষ্টের সময় অনেক বেশি সহযোগী হয়। তাই এই রোগের রোগীদের উচিত সবসময় ইনহেলার সাথে রাখা।
এছাড়া ধুলোবালি, ধোঁয়াযুক্ত স্থান এড়িয়ে চলা, অ্যারলার্জেনযুক্ত খাবার, পরিবেশ এড়িয়ে চলা, ঋতু পরিবর্তনকালীন সময়ে সবসময় সতর্ক থাকা, ওষুধ নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করা, ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখা, তামাক-সিগারেটের ধোয়া ও রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থ থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি পন্থাও রোগীকে অনেকাংশে হাঁপানির কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে। আর এই রোগের রোগীদের সবসময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা অনেক বেশি জরুরী।
☑️হাঁপানি নিরাময়ে ঘরোয়া টোটকা:
কিছু ঘরোয়া টোটকার মাধ্যমেও হাঁপানিরোগ কিছুটা নিরাময় করা সম্ভব। যেমন:
১. গরম পানিতে কয়েক টুকরা আদা দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি পান করা।
২. গরম দুধে ৩/৪ কোয়া রসুন দিয়ে ফুটিয়ে সেটা পান করা, যা যেকোনো ফুসফুসের রোগের জন্যই অনেক উপকারি।
৩. হাঁপানি নিরাময়ে অন্যতম প্রাচীন ঘরোয়া টোটকা হলো মধু। প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ মধুর সাথে দারচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট কম হয়।
৪. লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তাই, এক গ্লাস পানিতে লেবু রস ও সামান্য চিনি মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে উপশম পাওয়া যায়।
৫. শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে খুবই নির্ভরযোগ্য পানীয় হলো কফি। গরম কফি পান করলে শ্বাসনালী প্রদাহ লাঘব পায়।
৬. কাঁচা পেঁয়াজ খেলে নাসাপথ পরিষ্কার থাকে ও শ্বাসকষ্ট হ্রাস পায়।
☑️হাঁপানি কি কোনো ছোঁয়াচে রোগ?
হাঁপানি মানুষের ফুসফুসের একটি অসহনীয় ও মারাত্মক শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। এটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে, কিছু মানুষের ধারণা, এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। কিন্তু না! এটি একদমই ভুল একটি ধারণা। হাঁপানি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়! তাই হাঁপানি রোগীদের সংস্পর্শে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা বা আশংকা নেই। তাই সকলেরই উচিত, নির্দ্বিধায় এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা যত্ন করা ও খেয়াল রাখা।
⏹️বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হাঁপানি রোগের অবস্থান:
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিনগত ও দূষণজনিত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে হাঁপানি রোগের প্রকোপ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ অ্যাজমা এসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অ্যাজমা সেন্টারের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা: এবিএম ফারুকুল ইসলাম একটি ইন্টারভিউতে বলেন, “সকালে বহির্বিভাগে ৪/৫শ রোগী আসেন। বিকেলেও আসে ৪০/৫০ জনের মতো। ” কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগীই আধুনিক চিকিৎসা নিচ্ছে না।
অন্যদিকে, মোট হাঁপানি রোগীর অর্ধেকেরও বেশি শিশু এবং প্রতিদিন অনেক রোগীর মৃত্যুর কারণ হচ্ছে হাঁপানি রোগ। তাই, এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা এখন অনেক বেশি জরুরী।
বিশ্ব হাঁপানি দিবস (World Asthma Day):
প্রতি বছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বের সাথে পালিত হয় বিশ্ব হাঁপানি দিবস। বিশ্ব হাঁপানি দিবসের লক্ষ্য হলো হাঁপানি(Asthma) সম্পর্কে শিক্ষা, সচেতনতা, যত্নের গুরুত্ব প্রচারের মাধ্যমে এই রোগটি নিরাময় করা। বিশ্ব হাঁপানি দিবসে, সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা এবং রোগীর ক্যাম্প গ্রুপগুলি হাঁপানি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কার্যক্রমের আয়োজন করে। এর মধ্যে শিক্ষামূলক সেমিনার, স্বাস্থ্যমেলা এবং অ্যাজমা স্ক্রিনিংও অন্তর্ভুক্ত থাকে। অনেক সংস্থা অ্যাজমা সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করতে ও এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে জড়িত হওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষকে উৎসাহিত করে।
সচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি, বিশ্ব হাঁপানি দিবস সারা বিশ্বে উন্নত হাঁপানি যত্নের ও আধুনিক হাঁপানি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এবং আক্রান্ত রোগীদের জীবন উন্নত করার লক্ষ্যে একত্রিতভাবে এই রোগের নিরাময়ের জন্য কাজ করতে সকলের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা যোগায়।
#cuss
#world_asthma_day
References:
1.https://www.voabangla.com/…/drc-report-4…/3309115.html
2.https://www.jagonews24.com/m/photo/health/healthy/7468
3.https://www.bbc.com/bengali/news/2015/05/150505_sp_bd_asthma
4.https://ginasthma.org/world-asthma-day-2023/…(,raise%20awareness%20of%20Asthma%20worldwide.
5.https://www.daysoftheyear.com/days/asthma-day/
Content Credit:
✏️Written By:
Kakon Saha
General Member, CUSS
Team: Pterosaurs
Institute of Marine Sciences
Session : 2018-19
????️ Poster Credit :
Rahi Paul Oishi
General member, CUSS
Team : Supernova
Institute of Forestry and Environmental Sciences
Session : 2018-19
Tag:cuss